ডাকসু নয়, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর

প্রায় তিন দশকের অচলাবস্থা ভেঙে ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিধিবদ্ধ সময় পেরিয়ে গেলেও নতুন নির্বাচনের কোনও সাড়াশব্দ নেই। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র সংগঠনগুলোও এই দাবিটিকে আর সামনে আনছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারাও বলছেন, তাদের আগ্রহ এখন ডাকসু নয়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তারা মনে করছেন, এই সময়ে নির্বাচন হলে তাতে সরকারের প্রভাব থাকবে বেশি। তাছাড়া এ সময়ে নির্বাচিতদের কাজ করার সুযোগও থাকবে না।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন দেখেছি। বিভিন্ন হল থেকে বস্তাভর্তি ব্যালট উদ্ধার হয়েছে। আপনারাই (সাংবাদিকরা) সেগুলো উদঘাটন করেছেন। আসলে এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু হবার সুযোগ নেই। এরা বিরোধী মতের কাউকে নির্বাচিত হতে দেবে না।’

সাইফ মাহমুদ জুয়েলের দাবি, ‘লোক দেখানো দুই-একজনকে পরিকল্পিতভাবে জেতাবে কিন্তু কাজ করতে দেবে না। এই নির্বাচন মূল্যহীন, তার থেকে আসুন সবাই মিলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হই।’

দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হয় ২০১৯ সালে। ওই নির্বাচনে ভিপি হিসেবে নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানী নির্বাচিত হন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ডাকসু কমিটির মেয়াদ ১ বছর। এরপর নুরুল হকের দল গণ-অধিকার পরিষদ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে ডাকসু নির্বাচনের দাবি তোলা হলেও তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি।

ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ মনে করেন, ডাকসু নির্বাচন দরকার। ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, ডাকসু নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসাহ তৈরি হয়েছিল কিন্তু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুষ্ঠু ডাকসু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ডাকসু নির্বাচন নিয়মিত হতে থাকলে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ উন্নত হবে; সরকারদলীয় সংগঠনের একক কর্তৃত্ব কমে আসবে—এসব বিবেচনাতেই ডাকসু বন্ধ রাখা হচ্ছে।’

‘সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কার্যকর ডাকসু অবশ্যই সহাবস্থান নিশ্চিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারতো’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, ‘ষড়যন্ত্র, আঁতাত ও কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচিত নেতৃত্ব সেই সহাবস্থানে কোনও ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং বিগত ডাকসু নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র আধিপত্যই আরও বেপরোয়া হয়েছে।’

দীপক শীল বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচ‌নে অংশগ্রহণ কর‌বে রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লো। বাংলা‌দেশ ছাত্র ইউনিয়ন এক‌টি স্বাধীন ছাত্র গণসংগঠন। আমরা ছাত্র সমা‌জের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ ক‌রে থাকি। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের  চেতনায় সমৃদ্ধ ও শোষণমুক্ত বাংলা‌দেশ। সুতরাং, গণমানু‌ষের ভোটা‌ধিকার প্রতিষ্ঠা ও মু‌ক্তিযু‌দ্ধের চেতনায় বাংলা‌দেশ গঠনে সংগ্রামরত প্রগ‌তিশীল রাজ‌নৈ‌তিক দলের প্রতি আমা‌দের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ডাকসু নির্বাচন হলে অবশ্যই ভালো হতো। কিন্তু তার জন্য যে উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন তা বর্তমানে নেই। ডাকসু নির্বাচনের জন্য সব মহলের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রয়োজন, অনুকূল পরিবেশ লাগে। এর সঙ্গে জড়িত সবার নিরাপত্তার বিষয়টিও।