ছাত্রকে চড় মেরে কান ফাটিয়ে দিলেন ছাত্রলীগ নেতা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলে গেস্টরুম চলাকালীন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদের বিরুদ্ধে এক ছাত্রকে চড় মেরে কান ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাতে মীর মশাররফ হোসেন হলে গেস্টরুম চলাকালীন এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত হাসান মাহমুদ ফরিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। ভুক্তভোগী সজীব আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ তম ব্যাচের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ছাত্র।

জানা যায়, হলের সিনিয়রের অতিথির সঙ্গে একটি সমস্যাকে কেন্দ্র করে রাতে হলের ৪৭ ও ৪৮ তম ব্যাচের রাজনৈতিক কর্মী শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে ডাকে ৪৪ ব্যাচের ছা্ত্রলীগ পদধারী কয়েকজন। এ সময় দুপুরের ঘটনা নিয়ে ৪৪ ব্যাচের নেতারা জবাবদিহি করেন। পরে ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মারধর করতে বলেন ৪৭ ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থীকে। তাদের কথামতো ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মারধর করলেও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফরিদের তা পছন্দ হয়নি। তিনি হঠাৎ এসে ভুক্তভোগী সজীবের কানে সজোরে চড় মারেন। এ সময় সজীব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে যেতে বাধা দেন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান।

আরও জানা যায়, এ সময় গেস্টরুমে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ (পরিবেশ বিজ্ঞান-৪৪), সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান (ইতিহাস-৪৪), সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (মার্কেটিং-৪৪), সহ-সভাপতি শাহ পরান (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-৪৪), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন (রসায়ন-৪৪), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-৪৫), উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আলরাজি সরকার (সরকার ও রাজনীতি-৪৫) উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায়, সজীবকে চড় মারার পর সে কান্নাকাটি করে আর রাজনীতি করবে না বলে জানালেও তাকে অমানবিকভাবে মারধর করা হয়। কানে প্রচণ্ড ব্যথা পাওয়ায় সজীব চিকিৎসার জন্য মেডিক্যালে যেতে চাইলে সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান বলেন, ‘ও নাটক করতেছে। ওরে তোল। আজকে এই গেস্টরুম থেকে ওর লাশ বের হবে।’ এ সময় ইমরান আরও বলেন, ‘আগে দেখ ও নাটক করতেছে কিনা। আর এখন মেডিক্যালে নিয়ে গেলে নিউজ হবে। তখন আমরা বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে পারবো না।’ বলে মেডিক্যালে যেতে বাধা দেন। পরে সজীবের অবস্থা খারাপ হলে তাকে প্রথমে বিশ্ববিদালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে এবং পরে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভুক্তভোগীর অবস্থা জানতে চাইলে হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মামুন বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ইমার্জেন্সি বিভাগে এসেছিলেন। কানে সমস্যা থাকায় ইমার্জেন্সি ডাক্তার তাকে তিনতলায় ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) পাঠান। সেখানে ইএনটির (নাক-কান-গলা) ডাক্তার তাকে দেখেছেন। পরবর্তীতে ট্রিটমেন্ট নিয়ে তিনি হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সজীব বলেন, ‘হলের ব্লকের এক সিনিয়রের গেস্টের সঙ্গে সমস্যাকে নিয়ে আমাদেরকে গেস্টরুমে ডাকে ৪৪ ব্যাচের সিনিয়ররা। এ সময় তারা আমাকে, ৪৮ ব্যাচের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সিয়াম ও রসায়ন বিভাগের নাইমকে অমানবিকভাবে মারধর করে।’

অভিযুক্ত হাসান মাহমুদ ফরিদ চড় মারার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক কালচারের নিয়মিত গেস্টরুম হয়েছে। তবে চড় মারার কোনও ঘটনা ঘটেনি। আপনাকে যে অভিযোগ দিয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করেন।’

তবে পরে সজীবের অসুস্থ হয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘অসুস্থ হয়ে পড়ছে তাতে আমি কি করবো? আমি কিছুই জানি না। ১০-১২ জন সাক্ষী দিলেই হবে নাকি? ওদের বক্তব্য ওরা দিছে, আমার কথা আমি বলছি।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইমরানকে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রথমে তিনি গেস্টরুমের বিষয়ে অস্বীকার করেন। পরে গণমাধ্যমে বলেন, ‘রোজার আগে এটি আমাদের রুটিন গেস্টরুম। রোজায় সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য এ গেস্টরুম। এ সময় একটি ছেলে গেস্টরুমে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে রুমে যেতে বলি। সে হাসপাতালে যেতে চাইলে পরে তাকে হাসপাতালে পাঠাই।’

শিক্ষার্থীরা তাহলে আপনার নামে কেন অভিযোগ করছে জানতে চাইলে ‘এগুলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

মারধরের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘শুনলাম ওই ছেলের কানে আগে থেকে সমস্যা ছিলে। হলে রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে মিটিং বসেছিল। সেখানে নয়েজ সৃষ্টি হওয়ার কারণে তার কানের আগের সমস্যাটির পুনরাবৃত্তি হয়। এ ধরনের কোনও ঘটনা থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক এম ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। সে এখনও আমাদের কাছে লিখিতভাবে কিছু দেয়নি। সন্ধ্যায় আমরা হল প্রশাসন মিটিং ডেকেছি। এরপর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো।’