যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বরখাস্ত

যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনিকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলমের সভাপতিত্বে বিকাল ৪টা থেকে বসা সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার সিন্ডিকেট সভা শেষে রাত সাড়ে ৯টায় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান রেজিস্ট্রার আবু হোসেন। তিনি জানান, তদন্ত কমিটির সুপারিশে সিন্ডিকেট সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মাহমুদুর রহমান জনিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

তাকে বরখাস্ত করায় তাৎক্ষণিকভাবে উপাচার্যকে ধন্যবাদ জানিয়েছে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ। এদিকে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।

এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, সিন্ডিকেট সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। মাহমুদুর রহমান জনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর কিছুটা হালকা হলো। তবে নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শাস্তির মুখোমুখি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। প্রভোস্ট এবং প্রক্টর জড়িত থাকায় তাদেরকে অব্যাহতি দিতে হবে। মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সারা দেশের  ভর্তিচ্ছুদের কথা ভেবে আমরা পরীক্ষা আটকানোর সিদ্ধান্ত থেকে সড়ে দাঁড়াচ্ছি। তবে ভর্তি পরীক্ষার সময় আমাদের গণসংযোগ অব্যাহত থাকবে।

এর আগে, ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর মাহমুদুর রহমান জনি ও একই বিভাগে সে সময় নিয়োগ পাওয়া এক প্রভাষকের একটি অন্তরঙ্গ ছবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করা হয়। একইসঙ্গে বিভাগের শিক্ষক পদে আবেদনকারী ৪৩ ব্যাচের আরেক ছাত্রীর সঙ্গে কথাবার্তার অডিও প্রকাশ্যে আসে। যেখানে মাহমুদুর রহমান জনি তাকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর কথা শোনা যায়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তার শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। 

প্রাথমিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন স্পষ্ট নয় দাবি করে একই বছরের ৯ মার্চ পুনরায় গঠিত হয় ‘স্পষ্টীকরণ কমিটি’। গত বছরের ১০ আগস্ট ওই কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুসারে ছয় সদস্য বিশিষ্ট স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়।

সর্বশেষ, স্ট্রাকচার্ড কমিটির তদন্ত চলাকালে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কুরিয়ারযোগে উপাচার্যকে গালিগালাজ করার অডিও ক্লিপ সংবলিত একটি সিডি সাংবাদিকদের কাছে আসে। ৫২ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপে মাহমুদুর রহমান জনিকে উপাচার্যকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যায়।