জাবি ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ ও মামলা প্রত্যাহার দাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী গ্রাফিতি আঁকার জেরে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল সাবেক শিক্ষার্থী।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে তারা ‘অবিলম্বে অন্যায্য বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার কর’, ‘গ্রাফিতি আঁকার দায়ে বহিষ্কারাদেশ বাতিল কর’, ‘ছাত্রনেতাদের বহিষ্কারাদেশ বাতিল কর’সহ বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আন্দোলন দমন করতেই বঙ্গবন্ধুর নামের অপব্যবহার করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রাষ্ট্র একটি ইস্যুকে ঘুরিয়ে দিতে অন্য ইস্যু বাজারে আনে। ঠিক একইভাবে জাহাঙ্গীরনগর প্রশাসনও একই কাজ করছে। আন্দোলনের মূলস্রোতকে ঘুরিয়ে দিয়ে মাস্টারপ্ল্যানের টাকার ভাগ-বাটোয়ারার পথ সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ড. মাসউদ ইমরান মান্নু বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রে কেন গ্রাফিতি মোছা যাবে না? অথচ এমন কোনও আইন নেই যা এই ধরনের গ্রাফিতিকে রক্ষা করবে। গ্রাফিতি একটি চলমান অবস্থা। যারা গ্রাফিতি করেন, তারাও আশা করেন না যে সেটা সব সময় থাকবে। অমর্ত্য ও ঋদ্ধ যে কাজ করেছে, সেটা যদি অন্যায় হয়ে থাকে, তবে আমিও একই অন্যায় করতে চাই। শাহবাগে দাঁড়িয়ে আমি এ কথা বলে গেলাম। আমি এমন অপরাধ বারবার করতে চাই।’

৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক  সৌমিত্র জয়দ্বীপ বলেন, ‘হীরক রাজার দেশে-সিনেমার মতো করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার একটি প্রতিফলন হল প্রশাসনের এই উদ্যোগ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের বাইরেও বিকল্প ছায়া প্রশাসন কাজ করে। এখানে ৭৩ এর অধ্যাদেশের কোনও বালাই নেই। আজ যে অরাজকতা জাহাঙ্গীরনগর শুরু করেছে, তারই ধারাবাহিকতায় দুই ছাত্রনেতাকে লঘুপাপে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অথচ এটি খুব স্বাভাবিকভাবেই সমাধান করা যেতো।’

বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ দাস অঞ্জন বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরের মুক্ত পরিবেশের গলা টিপে ধরা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে দফায় দফায় আন্দোলনে নামতে হয়। জাহাঙ্গীরনগরে আগে পাখি গান গাইতো, এখন গায় না। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবাধে লুটপাট চালাচ্ছে। অবাধে ধর্ষণ চলছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের চিরায়ত পথ বেছে নিয়েছে। তারা দুই জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে। প্রশাসনকে আমি বলবো, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রদ্রোহ—এগুলো পুনরায় পাঠ করবেন আপনারা।’

এ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কাজল সিদ্ধান্তের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ইউল্যাবের শিক্ষক অলিউর সান, সাবেক শিক্ষার্থী সোহেল জাফর, সাদিয়া ফেরদৌস, অনিন্দ্য আরিফসহ আরও অনেকে।