নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হেনস্তা: দুই শিক্ষক বরখাস্ত

ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত এবং একই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ই মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪তম বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে গত ৩ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার সঙ্গে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে চা পানের দাওয়াতসহ একাধিক অনৈতিক প্রস্তাবের বেশ কিছু স্ক্রিনশট ফেসবুকে পোস্ট করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। শিক্ষকের এমন কাণ্ডে ফুঁসে ওঠেন ওই বিভাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ৪ মার্চ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেন।

বিষয়টি মানবসম্পদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ান আহমেদ শুভ্রকে জানানো হলে তিনি কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে শিক্ষার্থীদের ফোন ধরা থেকে বিরত থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে কর্মসূচি স্থগিত করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

পরে ৫ মার্চ যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রী উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিচার চান। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, শিক্ষক সাজন সাহা ২০১৯ সাল থেকে তাকে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মেসেজ দিয়েছে। মধ্যরাতে চা পানের দাওয়াত, অঙ্ক বোঝানোর নামে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা, শাড়ি পরে দেখা করার কথা বলতেন তিনি। অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ওই শিক্ষক কোর্সে নম্বর কমিয়ে দেওয়া, থিসিস পেপার আটকে দেওয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করেছেন। বিভাগীয় প্রধান রেজওয়ান আহমেদ শুভ্রকে বিষয়টি অবগত করলেও তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি।

গতকাল দিনভর আন্দোলন চলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, শুধু ওই এক শিক্ষার্থীই নন, শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে আরও অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তারা বিষয়টি গোপন করলেও এক ছাত্রী বিষয়টি সামনে আনায় তারাও অভিযোগ করতে শুরু করেন। অভিযুক্ত শিক্ষক ও বিভাগীয় প্রধানের বহিষ্কার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বিভাগের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক আতাউর রহমানকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে তদন্ত প্রতিবেদন কবে জমা দিতে হবে তা বলা হয়নি। এদিকে ৬ মার্চ থেকে ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের চলা আন্দোলনের মুখে গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীর স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে বিভাগীয় প্রধান শুভ্র ও সাজন সাহাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের অতিরিক্ত দায়িত্ব উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর নিজে গ্রহণ করেন।

তবে দু’জনকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তাদের বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। লাঠিসোটা নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে মহড়া দেন। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কলাভবনের তালা এক শিক্ষক ভেঙে ফেলায় শিক্ষার্থীরা চড়াও হন শিক্ষকদের ওপর। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখা হলেও শিক্ষার্থীদের দাবি না মানায় বিকাল সোয়া ৩টা থেকে পৌনে ৪টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।