এদিকে, গত ৬ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সাজারি’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। এগুলো যেকোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে যুগোপযোগী ভবন নির্মাণ করা হবে। তিনি আরও বলেছেন, ভবন ভেঙে মানুষ মারা গেলে হেরিটেজবাদীরা সে দায় নেবেন না, সে দায় সরকারের ওপরই পড়বে।
ঢামেকের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কে জানতে চাইলে বুয়েটের পুরাকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহের আহমেদ আনসারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পুরনো-নতুন মিলিয়ে বেশ কিছু ভবন রয়েছে। পুরনো ভবনগুলো ইটের তৈরি, ওগুলো অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন বিল্ডিংগুলো পিডব্লিউ বিল্ডিংকোড মেনেই করেছে।
আরও পড়তে পারেন:
এগুলো নিয়ে অ্যাসেসমেন্ট করার দরকার রয়েছে জানিয়ে ড. মেহের আহমেদ বলেন, সরকার বলছে, ৭২ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু কোন ৭২ হাজার ভবন, তা স্পষ্ট করছে না সরকার। কারণ, সেই বেসিসটা নেই। আমরা গত তিনবছর ধরে গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজে খারাপ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করণের কাজ করছি। ঠিক একই পদ্ধতিতে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলোও চিহ্নিত করণ করতে হবে। এর জন্য একটি মেথলজিল রয়েছে। যেটা কেবল দেখেই বলা যায় না। কিছু অ্যানালাইসিসের বিষয় আছে। বিল্ডিং-এর ভেতরে রড, কংক্রিট দিয়েছে কিনা, সেগুলোও ঠিকমতো দেখতে হবে।
ড. মেহের আহমেদ বলেন, ২০০৬ সালের পরে যেগুলো হয়েছে, সেসব নতুন ভবন অপেক্ষাকৃত ভালো। কারণ ২০০৬ সালে বিল্ডিং কোডের অফিসিয়াল গেজেট হয়। তবে এই হাসপাতালের যে পুরনো ভবনগুলো রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তখন বিল্ডিংকোড মেনে করা হয়নি। ওগুলো তৈরি হয়েছে বহু বছর আগে। তিনি বলেন, আমরা যদি ভেঙে ফেলতে চাই। তাহলে ভেঙে ফেলতে হবে। আর যদি হেরিটেজ হিসেবে রাখতে চাই। তাহলে সেটির রেট্রোফিটিং করতে হবে। আর সেটি করা সম্ভব। আমাদের দেশে সেই টেকনোলজি আছে। এখন হেরিটেজ হিসেবে রাখব কিনা, সেটি একটি ব্যাপার। যদি হেরিটিজ হিসেবে রাখতে হয়, তাহলে প্রিজার্ভ করতে হবে। না হয় ভেঙে ফেলতে হবে।
আরও পড়তে পারেন:
এদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. খাজা আব্দুল গফুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পুরনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ তো অবশ্যই। পরিকল্পনা চলছে এগুলো ভেঙে বিশ্বমানের হাইরাইজ বিল্ডিং করে হাসপাতাল করার জন্য। এ লক্ষ্যে চিঠিপত্র চলছে অনেকদিন ধরেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর এ সর্ম্পকিত চিঠিও এসছে। প্রধানমন্ত্রীও পাবলিকলি এটা ডিক্লেয়ার করেছেন।
ডা. খাজা আব্দুল গফুর আরও বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে শিগগিরই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ২০১০ সালে হাসপাতালটির তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শহিদুল হক মল্লিক গণপূর্ত বিভাগ ঢামেকের পুরনো ভবনটি পরীক্ষার জন্য চিঠি দেন। এরপর তারা জরিপ করলেও কোনও অংশ এখনও ভাঙা হয়নি। তবে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কাজটি দ্রুতই সম্পন্ন করা হবে বলে আশা করেন খাজা আব্দুল গফুর।
/এমএনএইচ/