প্রথমে ফেরত দেওয়া হয়েছিল নূর হোসেনকে। এবার শেখ রহমতুল্লাহ ও তরিকুল ইসলামের ফেরার পালা। এই দুই মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গিকে বাংলাদেশ যাতে ভারতের কাছ থেকে দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ফেরত পেতে পারে, সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। রহমতুল্লাহ ও তরিকুল দু’জনেই পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর আস্তানায় সংঘটিত বিস্ফোরণ মামলায় প্রধান অভিযুক্ত। তারা দু’জনই এখন পশ্চিমবঙ্গের জেলে বন্দি।
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে জেএমবি’র আস্তানায় বিস্ফোরণ হয়েছিল। ওই মামলার চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া চলতি মাসের (মে) মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তার পর মামলার বিচার শুরু হবে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বর লাগোয়া বিচার ভবনে। সম্ভবত তার আগেই ওই দু’জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হতে পারে। কারণ, এক বার আদালতে বিচার শুরু হয়ে গেলে সেই মামলার আসামি কোনও অভিযুক্ত বিদেশি নাগরিককে তার নিজের দেশে পাঠানো জটিল হবে বলে আইনজ্ঞদের একাংশের অভিমত।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় সোহেল শেখ ওরফে নাসিরুল্লাহ, বোমা মিজান ওরফে কাওসার, তালহা শেখ, কদর কাজীর মতো বাংলাদেশি নাগরিকেরা অভিযুক্ত। তবে ওই মামলায় অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন কেবল রহমতুল্লাহ এবং তরিকুল।
আরও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জ জেলার মদনগঞ্জের ফরাজিকান্দা গ্রামের শেখ রহমতুল্লাহ ওরফে সাজিদ ওরফে বুরহান শেখকে ২০১৪ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়। সরকারি নথি বলছে, বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ ওই দিন বিমানবন্দরের কাছ থেকে রহমতুল্লাহকে গ্রেফতার করে। তবে গোয়েন্দাদের একাধিক সূত্রের বক্তব্য, রহমতুল্লাহকে তার সাত দিন আগে ফারাক্কার কাছ থেকে ধরা হয়েছিল। খাগড়াগড় ঘটনার তদন্ত করা ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) বরাবরই রহমতুল্লাহকে জেএমবি’র বর্ধমান মডিউল বা গোষ্ঠীর প্রধান বলে অভিহিত করেছে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সূত্রে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও আসামে ছড়িয়ে থাকা জেএমবি’র যে গোষ্ঠীর কথা বেরিয়ে এসেছে, তাকে বর্ধমান গোষ্ঠী বলে উল্লেখ করেছে এনআইএ। গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য, জেএমবি’র মজলিশ-ই-শুরা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটির সদস্য এই রহমতুল্লাহ। যাকে ভারতে জেএমবি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত বা আমিরও বলা যেতে পারে।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ রহমতুল্লাহ’র বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে এনআইএ। রহমতুল্লাহ গ্রেফতার হওয়ার দশ-বারোদিন পর তার স্ত্রী বাংলাদেশে গ্রেফতার হন। তিনিও জেএমবি’র গুরুত্বর্পূণ সদস্য বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
ভারতে জেএমবি’র কার্যকলাপ, বিশেষ করে জঙ্গি শিবির গড়ে সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে রহমতুল্লাহর প্রধান সহযোগী ছিলেন তরিকুল ইসলাম ওরফে সাদিক ওরফে সুমন। চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা তরিকুলের আরও একটি ছদ্মনাম রেহান শেখ। নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে তিনি ভারতীয় এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের কাছ থেকে তরিকুলকে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর যখন গ্রেফতার করা হয়, সেই সময় তার স্ত্রী ছিলেন সন্তানসম্ভবা। মুর্শিদাবাদের লালগোলা ও বর্ধমানের শিমুলিয়া মাদ্রাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনায় এই তরিকুলই ছিলেন প্রধান ভূমিকায়।
আরও পড়ুন:
এনআইএ’র এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘রহমতুল্লাহ ও তরিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রচুর তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে আমরা বেশ কিছু নথিপত্রও উদ্ধার করেছি। যেগুলো তদন্তে অনেকটাই সাহায্য করেছে। তবে আমাদের চেয়েও ওরা দু’জন বাংলাদেশ সরকার তথা গোয়েন্দা-পুলিশের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের অন্য দু’টি রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে জেএমবি যে কার্যকলাপ চালাচ্ছিল, তার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে নাশকতা ঘটানো।’
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি। ওই চুক্তির ফলে ভারতে আটক যে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ বাংলাদেশি নাগরিককে সে দেশে পাঠানো হয়, তিনি সেখানে সাত-সাতটি খুনে অভিযুক্ত, নারায়ণগঞ্জের নূর হোসেন। গত বছরের ১২ নভেম্বর নূর হোসেনকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠানো হয়। নূরকে কলকাতার কাছ থেকে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ ২০১৪ সালের জুনে গ্রেফতার করেছিল। এবার রহমতুল্লাহ ও তরিকুলকে ফেরত যাওয়ার পালা।
এপিএইচ/