মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফী হেফাজতের পুরোধা। সারাদেশের আলেমদের মুরুব্বী। তিনি আমাদের অভিভাবক। শহীদ যারা, তারা আল্লাহর কাছে প্রকৃত মর্যাদা পাবেন। এ কারণে তাদের তালিকা করা হয়নি। হেফাজতের এই নেতা দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। ৪৪ বছর পরেও কি পুরো তালিকা করা সম্ভব হয়েছে? তাহলে হেফাজতের কেন?’
এ বিষয়ে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘আমরা কেন তালিকা প্রকাশ করবো। আমরা তো শহিদদের বিচার কারও কাছে আর চাইতে পারি না। এর বিচার করার ক্ষমতা তো কারও নেই। আল্লাহই সে বিচার করবেন। সেজন্য আমাদের আমির এসব তালিকা প্রণয়নের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- সবর করো, খবর হবে।’
জানা যায়, ৫ মের পরে একবারই কেবল এ তালিকা প্রণয়ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। সঠিক নেতৃত্ব না থাকায় পরে কেউই এ তালিকা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। ঢাকা মহানগর হেফাজতের উদ্যোগেও তালিকা করার কাজ একবার শুরু করা হয়েছিলো। কেন্দ্রীয় এক যুগ্ম মহাসচিবের সহায়তায় সে তালিকার কাজ শুরু হলেও মুখ থুবড়ে পড়ে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই। সে তালিকা অনুযায়ী মাত্র একশ জন ‘শহিদের’ নাম খুঁজে পেয়েছে তারা। এর মধ্যে বেশিরভাগ ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও কুমিল্লার। নরসিংদীতে ১৩ জন রয়েছে বলেও জানা গেছে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ ৬১ জন নিহত হওয়ার দাবি করে একটি তালিকা প্রকাশ করে। পরে অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমানকে কারাগারে যেতে হয়।
আরও পড়ুন: আচমকা নয়, পরিকল্পিতভাবেই শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় হেফাজত
প্রসঙ্গত, গত বছর এ সময়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল হেফাজত নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান কাসেমীর সঙ্গে। তিনি জানিয়েছিলেন, আমাদের কাছে একশ’ জনের ওপরে শহিদের তালিকা আছে। সরকারের কারণে প্রকাশ করতে পারছি না। তবে সবার পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছি এবং সাধ্য অনুযায়ী সহায়তা করেছি।’
যদিও ২০১৩ সালের ৩১ আগস্ট হেফাজতের আমির বলেছিলেন, ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হলে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শহিদদের তালিকা দেবে হেফাজতে ইসলাম। তদন্তের জন্যে গঠিত এ কমিশনের কাছে তালিকা হস্তান্তর করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছিলেন হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।’
ওই সময় শফী অভিযোগ করে বলেন, ‘শাপলা চত্বরের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সরকার সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হেফাজত নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করছে। আর এ কারণেই নিহতদের তালিকা শুধু বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের হাতেই দেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে আজিজুল হক ইসলাবাদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের এখন দাবি, তারা যেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করে। এই কমিশনকে প্রয়োজনে আমরা সহযোগিতা করব।’
১২ মে হেফাজতে ইসলাম একটি বিবৃতি দেয়। সেই বিবৃতিতে দাবি করা হয়, শাপলা চত্বরে ব্যাপক প্রাণহানির বিষয়টি গুজব নয়, একেবারেই সত্যি। ঘটনার পর সেখান থেকে লাশ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও শতভাগ সত্য। তবে ওইদিন ঠিক কত লোক পুলিশের গুলি ও নির্মম পিটুনিতে শহিদ হয়েছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনই বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: ৮৩ মামলার চার্জশিট হয়েছে মাত্র ৪টির
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, সঠিক পরিসংখ্যান তৈরির কাজ চলছে। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম ওই ঘটনার সঠিক খবর না দিলেও বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক হতাহতের বিষয়টি এসেছে এবং আসছে। সংখ্যাও শত শত বলে কোনও কোনও বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে আভাস দেওয়া হয়েছে। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত পল্টন, গুলিস্তান, বিজয় নগর এলাকায়ই ১৫ জন শহিদ হয়েছেন। তাদের মৃতদেহের কয়েকটি পাশের দু'টি হাসপাতালে পাওয়া যায়। কয়েকটি লাশ সমাবেশস্থলে আনা হয়। আর দুয়েকটি লাশ গুম করা হয়।
আরও বলা হয়, আর ঘটনাস্থলে কী পরিমাণ লাশ পড়ে ছিল তা ৭ মে দুয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি এবং কিছু ভিডিও চিত্র থেকেই অনুমান করা যায়। এই চিত্রগুলো অভিযানের শেষে শাপলা চত্বর সংলগ্ন সোনালী ব্যাংকের সিঁড়ি ও বারান্দা এবং কালভার্ট রোড ওতদসংলগ্ন গলি থেকে তোলা। ওইসব চিত্রেই ২০টির বেশি লাশ দেখা যাচ্ছে। ফলে পুরো এলাকায় আগে পরে কত সংখ্যক মানুষ শহীদ হয়েছিল তা অনুমান করা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতেই লাশের সংখ্যা হাজার হাজার হওয়ার আশঙ্কাটি আসছে।
এসটিএস/সিএ/এজে/