মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছিল যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকায় যানজট নিরসনের জন্য। সে অনুযায়ী ২০১২ সালে ফ্লাইওভার উদ্বোধন হয়। এরপর থেকে ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী যানবাহন খুব স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে এর নিচের সড়ক দিয়ে চলাফেরার সময়।
আরও পড়তে পারেন: বজ্রাঘাত নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফ্লাইওভার যেখান থেকে শুরু হয়েছে সেই চানখারপুল থেকেই বিশৃঙ্খলা। এখানে ফ্লাইওভারের জন্য পৃথক লেন থাকলেও সেটা স্থানীয় যানবাহনই ব্যবহার করছে। চানখারপুল চৌরাস্তা থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত সড়কের দু’পাড়ে রয়েছে অবৈধ দখলদার। গুলিস্তান এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে মুরগির খাচা রাখা হয়। এ জন্য জায়গাটির নামকরণ হয়েছে ‘মুরগিপট্টি’। এখানে দুর্গন্ধের জন্য হাঁটাচলাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। কাপ্তানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী দুলাল বলেন,‘ফ্লাইওভারের নিচটা এমনিতেই নোংরা পড়ে থাকে। তাই আমরা সাময়িক সময়ের জন্য সেখানে মুরগির খাচি রাখি।’
গুলিস্তানের আরেকটি সমস্যা হল ফুটপাত ও সড়ক হকারদের দখলে থাকায় কোনও গাড়ি ফ্লাইওভারে স্বচ্ছন্দে ওঠানামা করতে পারে না। এছাড়া বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে কোনও গাড়ি সোজা ফ্লাইওভারে আসতে পারে না। গুলিস্তান স্কয়ারে ট্রাফিক পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে।
সায়েদাবাদ জনপথ মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত সড়কে বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। যাত্রাবাড়ী থেকে ধোলাইরপাড় পর্যন্ত সড়কেরও একই অবস্থা। টিকাটুলীতে রাজধানী মার্কেটের উত্তরপাশের সংযোগ সড়কে গর্তের শেষ নেই। সামান্য বৃষ্টি হলে এসব গর্তে পানি জমে থাকে দীর্ঘ সময়। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় সড়কের ওপরই রয়েছে বর্জ্যের ভাগাড়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওয়ারি স্কুলের বিপরীতে ডিভাইডারের ওপর সিটি করপোরেশন বর্জ্যঘর নির্মাণ করছে।
আরও পড়তে পারেন: হামলাকারী আইএস সদস্যকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা
ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের ডিভাইডার বানানো হয়েছে প্রশস্ত করে। এ জন্য সড়কের প্রশস্ততা কমে গেছে। এ কারণে যানবাহন একটা সারিতে অত্যন্ত ধীর গতিতে চলাচল করে। পথিমধ্যে কখনও একটা গাড়ি বিকল হলে পেছনে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। শিকড় পরিবহনের এক চালক বলেন, ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের প্রশস্ততা বাড়ানো হলে এক সঙ্গে একাধিক গাড়ি চলাচল করতে পারত। রাস্তা খারাপ থাকায় প্রায় প্রতিদিন আমাদের গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। আমাদের কাছে এটা এখন অভিশপ্ত সড়ক। তিনি জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত শহীদ ফারুক সড়কের পূর্বাংশ ভেঙেচুরে একাকার হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘদিনেও সৌন্দর্যবর্ধন না করায় ডিভাইডারের ওপর বর্জ্যের স্তূপ জমা হয়ে আছে। ডিভাইডারের অনেক স্থান ইট, পাথর ও রাবিশের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব রাবিশ সরানোরও যেন কেউ নেই। শুকনো মৌসুমে এই রাবিশ থেকে প্রচণ্ড ধূলি হয়। রাজধানীর মার্কেটের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সড়ক ডিভাইডারের মাটির কারণে সামান্য বাতাসে ধূলি উড়ে। এই ধূলিতে দোকানের মালামাল দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর বৃষ্টিতে সড়ক হয়ে পড়ে কর্দমাক্ত।
ফ্লাইওভারের নিচে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় কোনও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নেই। ট্রাফিক পুলিশের অন্তত চারজন কর্মকর্তা এখানে দায়িত্ব পালন করলেও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। গুলিস্তান থেকে কোনও গাড়ি যানজটবিহীন যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা অতিক্রম করতে পারে না। যাত্রাবাড়ী থানা ভবনের সামনে গড়ে উঠেছে বাস স্ট্যান্ড।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় তিন মাস ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের মেরামত কাজ করছে। প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক মেরামতে এতটা সময় নেওয়ায় ক্ষোভেরও যেন শেষ নেই মানুষের।
আরও পড়তে পারেন: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সম্মাননা পেলেন ওয়াসফিয়া
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। আশা করি জুনের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, ডিভাইডারের সৌন্দর্যবর্ধনসহ সড়কটি দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে যাতে গাড়ি চলাচল করতে পারে সে জন্য আমরা একটা পরিকল্পনা করেছি। সোমবার ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে বসব। পুলিশের সহযোগিতায় এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে আর সমস্যা থাকবে না।
/এমএসএম/