রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সুইফটকেই দায়ী করলো তদন্ত কমিটি

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনবাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সুইফটই দায়ী বলে জানিয়েছেন সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেখা গেছে, সুইফট আরটিজিএফের সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার ফলে এই অর্থ চুরির ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া সুইফট নিজেই তাদের সার্ভার ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার ব্যবস্থা করেছিল। ফলে হ্যাকারদের অর্থ চুরি করতে সহজ হয়েছে।
রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ড. ফরাসউদ্দিন এসব কথা বলেন।
ফরাসউদ্দিন বলেন, দুটি দেশের হ্যাকাররা রিজার্ভ চুরির জন্য বিশেষ একটি ম্যালওয়্যার তৈরি করে। এর মাধ্যমে এই অর্থ চুরি করা সম্ভব হয়। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড নিউইয়র্ক) এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ করেনি। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অসতর্কতা, অসাবধাণতা, অজ্ঞতা ও দায়িত্বহীনতা ছিলো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, তারা অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্টে টাকা আদায়ের জন্য ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের উপর চাপ প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। আর পুরো টাকা আদায় করতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর পরামর্শ  দিয়েছিলেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভের আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার তদন্তে থাকা বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগও বলেছে, সুইফটের টেকনিশিয়ানদের ‘অবহেলার কারণেই’ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট সার্ভার হ্যাকারদের সামনে অনেক বেশি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে।

ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে কয়েকদিন আগে সুইফটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কোনও সদস্যের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব নয়। পরে বিশ্বজুড়ে সদস্য ব্যাংকগুলোতে চিঠি দিয়েও সুইফট একই কথা জানায়।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কারিগরি দিকটি তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্স ও ফায়ার আইকে নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের প্রতিবেদনের একটি অংশ হাতে পাওয়ার কথা জানিয়ে গত শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে এখনও তিনটি হ্যাকিং গ্রুপ ওঁৎ পেতে আছে, যাদের মধ্যে একটি দেশের রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থাও রয়েছে।

এর আগে ওই তদন্তের বরাত দিয়ে গত সপ্তাহে ব্লুমবার্গ নিউজ জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে হামলায় জড়িত তিনটি হ্যাকার গ্রুপের একটি পাকিস্তান এবং একটি উত্তর কোরিয়ার।

এক সপ্তাহ আগে রয়টার্সের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, রিজার্ভ চুরির ক্ষেত্রে সুইফটের ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার ‘অ্যালায়েন্স একসেস’ থেকে ভুয়া মেসেজ পাঠানোর পর তার ট্র্যাক মুছে ফেলতে যে ম্যালওয়্যার চোরেরা ব্যবহার করেছিল, তা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিএই সিসটেমস নামের একটি ব্রিটিশ সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের চুরি যাওয়া অর্থের প্রায় অর্ধেক ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) একটি শাখার কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যাসিনোর জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়েছে বলে ঘটনা তদন্তে দেশটির সিনেটের শুনানিতে উঠে এসেছে।
ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের একটা অংশ হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এর মধ্যে তিন দফায় মোট ৯৮ লাখ ডলার তিনি ফিলিপাইনের মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিলের (এএমএলসি) কাছে ফেরত দিয়েছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। তার আরও আড়াইশ মিলিয়ন পেসো ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে।

/জিএম/এসএনএইচ/এপিএইচ/