একাধিক মন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানান দিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে সেলিম ওসমানের সমালোচনা করেছেন। শুধু তাই নয়, এমপি হয়ে এ ধরনের নিন্দনীয় কাজ করে সংসদ সদস্যদের মর্যাদাহানি ঘটিয়েছেন বলেও সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন মোহাম্মদ নাসিম। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত এমপির দোষ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য হলেও শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। আওয়ামী লীগ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে মূলত তিনটি কারণে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষমতাসীনদের বিব্রত হওয়ার কারণগুলো জানা গেছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওসমান পরিবারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ও গভীর সখ্যতা, সেলিম ওসমান এক সময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন এবং একজন সংসদ সদস্য হয়ে তিনি এ ধরনের আচরণ করে অন্য সংসদ সদস্যদের সম্মানহানি ঘটিয়েছেন। এসব বিষয় সামনে আসায় সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হলেও ক্ষমতাসীনরাও বিব্রত।তবে বিব্রত হলেও ব্যবস্থা নিতে পিছপা হয়নি সরকার।
আরও পড়ুন:
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। তবে তিনি কখনও জাতীয় পার্টির সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তার ভাই নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় পার্টির সঙ্গে সেলিম ওসমানের সম্পর্ক শুধু এমপি হওয়া পর্যন্তই।
সম্পাদকমন্ডলীর এক নেতা বলেন, সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হলেও এ পরিবারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অনেক গভীরে। তবে তাই বলে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার মানসিকতা আওয়ামী লীগের নেই। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার হোক আওয়ামী লীগও তা চায় ।
আরও পড়ুন:
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওসমান পরিবারের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু ওসমান পরিবার অপরাধ করলেও তাদের পক্ষে সাফাই গাইবে আওয়ামী লীগ তেমন দল নয়। আওয়ামী লীগ এর সুষ্ঠু ও দ্রুততার সঙ্গে বিচার করতে চায়। ইতোমধ্যে শিক্ষককে তার পদে পুনর্বহাল করা হয়েছে। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিও বাতিল করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এসব নানা বিষয় চিন্তা করে ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তি হোক তা চায় আওয়ামী লীগ। এজন্যে লাঞ্ছিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের পাশে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীনরা। পাশাপাশি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীরা। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিন্দনীয় এ ঘটনার সুরাহা চেয়েছেন। ওসমান পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের কথা চিন্তা না করে অপরাধকে বড় করে দেখে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে যত দ্রুত সম্ভব ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। শিক্ষককে চাকরিতে পুনর্বহাল করেছে। ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করেছে।অভিযুক্ত সংসদ সদস্য দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এপিএইচ/