বাংলা ট্রিবিউনকে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার

থানচির খাদ্য সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ বের করা হবে

‘বান্দরবানের থানচিতে চরম খাদ্যসংকট’ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নজরে এসেছে পুরো বাংলাদেশের। অসহায় মানুষগুলোকে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসনও। তবে এমন নীরব দুর্ভিক্ষের মতো পরিবেশ কী করে সৃষ্টি হলো এবং এই সংকট নিরসনে প্রশাসন কী ভূমিকা পালন করছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এসব বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক। তিনি জানিয়েছেন, এই খাদ্য সংকট সাময়িক। কয়েকদিনের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

তিনি আরও জানান, সাময়িক এই সংকট দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ চিংয়ের নির্দেশনায় কাজ চলছে। সাময়িক এই সংকট আমরা দ্রত কাটিয়ে উঠবো।

থানচিতে খাদ্য সংকট নিরসনে প্রশাসনের কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে  জেলা প্রশাসক বলেন, সোমবার হেলিকপ্টারে আট মেট্রিক টন চাল পাঠানো হয়েছে। রেমাক্রির দলিয়ানপাড়া,বড় মদক, তিন্দুর জিন্না পাড়ায় বোটযোগে সাত মেট্রিক টন পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে তা উপজেলার কর্মকর্তারা বিতরণ করবেন।

তিনি আরও বলেন, আগামী ৩১ মে থানচির রেমাক্রিতে এলাকার জনপ্রতিনিধি  হেডম্যান,কারবারি, সাংবাদিকদের নিয়ে মত বিনিময় সভা করা হবে। এই মত বিনিময় সভায় খাদ্য সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথ বের করা হবে।

অক্টোবর পর্যন্ত থানচির দুর্গম এলাকাগুলোতে খাদ্য সংকট বিরাজ করবে, এসময় পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অক্টোবর পর্যন্ত যাতে খাদ্য শষ্য সরবরাহ করা যায়, সেই বিষয়টি ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে ১শ’ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সামনে চাল আরও লাগলে পাওয়া যাবে।

দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের অভিযোগ খাদ্য সংকটপূর্ণ এলাকাগুলোতে জনপ্রতিনিধিরা সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ (খাদ্যশষ্য) বিতরণ না করে ত্রাণ আত্মসাৎ করে, ফলে পর্যাপ্ত ত্রাণ পায় না অসহায় মানুষগুলো। এবার সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ সম্ভব হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দিলীপ কুমার বণিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সুষ্ঠুভাবে যাতে ত্রাণ বিতরণ করা হয় সে ব্যাপারে উপজেলার কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে।জেলা থেকেও কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছে সেখানে। আমরা এই ব্যাপারে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতাও কামনা করেছি।

খাদ্য সংকটের কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে দীলিপ কুমার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জুমচাষ হয়নি, পাহাড়ি জমি দিন দিন কমছে, সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও নেই। আর এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় ও জনগণের বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় এখানে এমন খাদ্য সংকট হয়েছে।

খাদ্য সংকটের স্থায়ী সমাধানের কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলা ট্রিবিউনকে জেলা প্রশাসক বলেন, সেখানে বিকল্প খাদ্য ভাণ্ডার তৈরি ও মজুদের ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। দ্রুত স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে পাবো বলে আমরা আশাবাদী।

অনেকে বিষয়টিকে দুর্ভিক্ষ ও ভয়াবহ খাদ্য সংকট হিসেবে অবহিত করেছে, প্রশাসন তা কিভাবে দেখে এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের মাথাপিছু আয় ও  রিজার্ভ বেড়েছে। বান্দরবানের গোডাউনেও  খাদ্য মজুদ আছে। এটা সাময়িক সংকট, খাদ্য সংকটও নয়।

২০১২ সালে বান্দরবানের খাদ্য সংকটের সময় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ত্রাণ তৎপরতায় এগিয়ে আসে। এর প্রেক্ষিতে এবার উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা চাওয়া হবে কিনা প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উন্নয়ন সংস্থার সাহায্য আমরা চাইবো না। আমাদের খাদ্যশষ্য আছে, আমরাই সংকটের মোকাবেলা করতে পারবো। তবে স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কোনও উন্নয়ন সংস্থা প্রস্তাব দিলে আমরা তা বিবেচনা করবো।

প্রসঙ্গত, বান্দরবানের থানচির দুর্গম রেমাক্রি, তিন্দু, ছোট মদক,বড় মদক ও সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় বসবাসরত ত্রিপুরা, গাঁরো, মারমা আদিবাসীরা খাদ্য সংকটের কারণে জংলি আলু, মিষ্টি কুমড়া খেয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ খবর পেয়ে সরকার ইতোমধ্যে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় ১৪৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে।

/বিডি/এআর/টিএন/