ভারতে এই চক্রের মূল হোতার নাম টি রাজকুমার রাও। কলকাতার রাজারহাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজকুমার রাও ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের বাসিন্দা। কলকাতার ওই এলাকায় তিনি বছর তিনেক ধরে বসবাস করছিলেন। তাকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল, ঝিনাইদহ, ফরিদপুরের মতো জেলা থেকে গ্রামের গরিব মানুষদের কাজ দেওয়ার নাম করে ভুলিয়েভালিয়ে এনে তাদের কিডনি বেচে দিতেন।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) ও দিল্লি পুলিশ সূত্রের খবর, রাজকুমারের বেশ কয়েকজন এজেন্ট আছে বাংলাদেশে। তারাই রাজকুমারের চক্রের হয়ে অভাবী মানুষ বা কিডনিদাতা জোগাড় করে দিতো, মোটা কমিশনের বিনিময়ে। বুধবার রাজকুমারকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দিল্লির সরিতা বিহার থানার পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকে কিডনিচক্রের বাংলাদেশি এজেন্টদের নাম জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
দিল্লি পুলিশ জানাচ্ছে, অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা রাজকুমারের কিডনি পাচারচক্রের জাল কলকাতা, দিল্লি, জালন্ধর, কোয়ম্বত্তুর ও তার নিজের শহর হায়দারাবাদের মতো দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিল। তবে বছর তিনেক ধরে তিনি কলকাতার রাজারহাট-বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের খামার শিবতলা এলাকায় বাড়ি কিনে বসবাস করছিলেন। প্রথমে একটি একতলা বাড়ি কেনেন। ছ’মাসের মধ্যেই আরেকটি দোতলা বাড়ি ও জমি কেনেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছেন, কিডনিদাতা হিসেবে বাংলাদেশের অভাবী মানুষকে বেশি সংখ্যায় পেতেই তিনি কলকাতায় বসবাস শুরু করেছিলেন। তদন্তকারীরা জেনেছেন, মূলত উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ওই অভাবী মানুষেরা এ পারে ঢুকতেন। বেশিরভাগই চোরা পথে, তবে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে তাদের কেউ কেউ যে আসেননি, এমনটা নয়।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, ভাল মজুরির কাজ পাচ্ছেন ভেবে বাংলাদেশের গ্রাম থেকে আসা হতদরিদ্র মানুষেরা এক-এক জন নিজের কিডনি এক থেকে তিন লাখ ভারতীয় মুদ্রায় বেচেছেন। যেখানে ভারতের অন্য কয়েকটি রাজ্যের কিডনিদাতাদের ১০-১২ লাখ টাকা দিতে হয়। ওই দরে পাওয়া এক-একটি কিডনির দাম ভারত এবং নেপাল-শ্রীলঙ্কা-ইন্দোনেশিয়ার ‘বাজারে’ বিক্রি করা যেত ২৫-৩০ লাখ টাকায়। সেদিক থেকে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষদের কিডনি পেলে রাজকুমার ও তার চক্রের লোকজনের নিট আয় অনেক বেশি হতো।
আইবি’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘যত সস্তায় কিডনি পাওয়া যাবে, লাভ তত বেশি। কারণ, কিডনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে সব সময়ে চড়া থাকে। কাজেই, কেন রাজকুমার ও তার চক্র বাংলাদেশের অভাবী মানুষদের ‘টার্গেট’ করেছিলেন, আর দেশের এত জায়গা থাকতে তিনি কেন কলকাতা লাগোয়া এলাকাতেই ঘাঁটি গাড়লেন, সেটা এই লাভের জায়গা থেকেই অনুমান করা যেতে পারে।’’
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ২০১৩ সালের একটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। সে বছর গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নেপাল থেকে আসা একটি টাটা সাফারি গাড়ি আটক করেছিল আইবি। ওই গাড়িতে থাকা চার জন বাংলাদেশি জানিয়েছিলেন, নেপালে ভাল মজুরির কাজ পাবেন বলে তারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছেন। তাদের কারও কাছেই বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা ছিল না। গাড়ির চালক অবশ্য সত্য ফাঁস করে দেন। তিনি জানান, নেপালে নিয়ে গিয়ে তাদের কিডনি কেটে নেওয়ার কথা ছিল।
গোয়েন্দারা এখন বুঝতে পারছেন, ওই চক্রেরও হোতা ছিলেন টি রাজকুমার রাও।
আরও পড়ুন:
গুপ্তহত্যাও বন্ধ করতে পারবো: প্রধানমন্ত্রী
মিতু হত্যার ঘটনায় একজন গ্রেফতার
একান্ত সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম: আলমগীরআমরা যুদ্ধ করতে চাই না
এপিএইচ/