সোনিয়া সরকার ছাড়াও,খালিদ হাসান,জাকিয়া তাসনিমসহ বন্ধ হয়ে যাওয়া নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার থেকে মেডিক্যাল কলেজটি খুলে দেওয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে আসছেন। তারা বলেন, দু’দিন ধরে রোজার ভেতরে এখানে এসে বসে থাকছি, কেউ কেউ রাতে ঢাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকছি। আমাদের তো এই কষ্ট করার কথা না,আমরা কোনও অন্যায় করিনি,তাহলে কেন সাজা পাবো আমরা?
মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে সোনিয়া আরও বলেন, সরকার বলেছে,আমরা মাইগ্রেট করতে পারবো, কিন্তু এখন আমরা কোথায় মাইগ্রেট করবো,আমি গিয়ে দাঁড়ালেই কোনও মেডিক্যাল কলেজ আমাকে ভর্তি করে নেবে না, আমরা পরীক্ষাও দিতে পারবো না, আমাদের জীবন থেকে ছয় মাস চলে যাবে,এভাবে কেন আমাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করা হবে প্রশ্ন করেন সোনিয়া।
তিনি বলেন, সরকার যে সব কারণে মেডিক্যাল কলেজটি বন্ধ করেছে, কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে সেসব শর্ত পূরণ করিয়ে নিয়ে কলেজ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারে। আমরা তো কোনও দোষ করিনি,আমাদের শিক্ষা জীবন যেন ব্যাহত না হয় সেই আবেদন করছি সরকারের কাছে।
গত ১২ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মেডিক্যাল কলেজ নীতিমালা পূরণ করেনি উল্লেখ করে দেশের তিনটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দেন। কলেজগুলো হচ্ছে রংপুরের নর্দান মেডিক্যাল কলেজ, গাজীপুরের সিটি মেডিক্যাল কলেজ,আশুলিয়ার নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজ। এসব মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদেরকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ অন্যান্য বেসরকারি কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে।
সরকারের ওই ঘোষণার পর নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসে পুলিশ। সোমবার রাত পৌনে ৫টার দিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে লাঠিচার্জসহ বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ছুঁড়ে। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাইগ্রেশন যদি করতেই হয় তাহলে আমাদের আর্থিক এবং সময়ের যেন কোনও ক্ষতি না হয় সরকারকে সেদিকে নজর দিতে হবে। কারণ, মাইগ্রেশন করতে গেলে অনেক কলেজেই উন্নয়ন ফি দিতে হবে। কলেজের হোস্টেলে সিট পাওয়ার বিষয় রয়েছে। সরকার যদি নিজে উদ্যোগী হয়ে আমাদের অন্য কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করে তা হলে হয়তো আমাদের অর্থ এবং সময় দু’টোই বাঁচবে।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাকিয়া তাসনিম বলেন, আমি এখন চতুর্থ বর্ষে আছি। কিন্তু মাইগ্রেশন রুলস অনুযায়ী অন্য কোথাও শুরু করলে আমাকে তৃতীয় বর্ষ থেকে শুরু করতে হবে। তা হলে আমার এই দুই বছরের মূল্য কে দেবে? এমবিবিএস এমনিতেই অনেক দীর্ঘ কোর্স। ফলে আমাদের আরও বেশি সময় লাগবে। আমাদের ব্যাচে আমরা ৭৫ জন। এই ৭৫ জন কোথায় যাবো? সরকার আমাদের ভাগ করে দিক। আমরা কোন মেডিক্যাল কলেজে যাবো, কতজন করে যাবে এবং টাকা পয়সার কী হবে। সেই টাকা কী সরকার দেবে নাকি কর্তৃপক্ষ দেবে প্রশ্ন করেন তিনি। তাসনিম বলেন,আমাদের পক্ষে এখন আর টাকা দেওয়া সম্ভব নয়, আমরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি।
পরিবারের আর কিছুই দেওয়ার নেই জানিয়ে সোহেলি আজাদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের পরিবারের আর কিছু দেওয়ার নেই। এজন্য মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রেও আমরা চাই সরকার সব কিছু ঠিক করে দিক। একই সঙ্গে যেন আমাদের সময় নষ্ট না হয়, আমরা চলতি বছরের জুলাইয়ের পরীক্ষার্থী, আমরা যেন ঠিক সময়েই পরীক্ষা দিতে পারি সেই অনুরোধ রাখতে চাই সরকারের কাছে।
আরও পড়ুন: জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলবে, বাড়ছে না বিশেষ অভিযানের মেয়াদ
/জেএ/এমএসএম /