ক্রসফায়ারের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে: মেনন

রাশেদ খান মেননক্রসফায়ারের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই দেখছি ক্রসফায়ারে জঙ্গি নিহত হচ্ছে। ক্রসফায়ার জঙ্গি সমস্যার সমাধান নয়, বরঞ্চ আমরা লক্ষ্য করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর মধ্য দিয়ে তাদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমাদের মূল অর্থনীতির মধ্যে মৌলবাদী অর্থনীতি সরব উপস্থিতি। অর্থনীতি সমিতির পরিসংখ্যান অনুসারে বাংলাদেশে মৌলবাদী অর্থনীতির নিট মুনফা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। দেশের মূল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হলেও মৌলবাদী অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৯ থেকে ১০ শতাংশ। আর এই অর্থ দিয়েই তারা ধর্মের নামে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের সব ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি নবম সংসদেই সমস্ত জঙ্গিবাদী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি প্রস্তাব করেছিলাম। এই সংসদে সেটা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু কোন মন্ত্রণালয় সেটা বাস্তবায়ন করবে এই অজুহাতে সেটা হিমাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজ এই মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী তৎপরতা কত বাস্তব সেটা সবাই অনুধাবন করছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশি-বিদেশি অস্ত্রের সাহায্যে এই জঙ্গি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এই জঙ্গি গ্রুপগুলো বর্তমানে গুপ্তহত্যায় মেতে উঠছে। এরই অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের ওপর অ্যাডভাইজরি (উপদেশ) চাপিয়ে দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে মানুষ যাতে এদেশে ভ্রমণে না আসে, কেবল তাই না বিনিয়োগ না করার জন্য তারা আহ্বান করছে। আজ লক্ষ্য করছি তারা যে আইএসের উপস্থিতির কথা বলে আমাদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসতে চাইছে, সেই আইএস এখন তাদের ওখানে উপস্থিত। যদিও বারাক ওবামা বলছেন, তাদের দেশে আইএসের উপস্থিতি নেই।’

জঙ্গিবাদ নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ কেউ কেউ দাবি করছেন, গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির কারণে এই জঙ্গিবাদের সৃষ্টি। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, এদেশে হুজির জন্ম হয়েছিল বিএনপি আমলে। নিজামী-মুজাহিদ সাহেবরা সেদিন বাংলাভাইয়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। এখনও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এই গুপ্তহত্যার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন। এর অর্থ তারা জঙ্গি থেকে দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে চান। তাদের পুরনো রাজনীতি একইভাবে কাজ করছে।’

ইউপি নির্বাচন অর্জনকে ধ্বংস করেছে
সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘সামরিক সরকার ও বিএনপি জামায়াতের ভোট দখলের বিরুদ্ধে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ঐতিহ্য কায়েম করেছিলাম। কিন্তু এবার ইউপি নির্বাচন আমাদের সেই অর্জনকে ধ্বংস করেছে। নির্বাচন কমিশন বসে বসে সেই ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা পুনর্গঠিত করতে না পারলে গণতন্ত্র কিন্তু সত্যিকার অর্থেই বিপন্ন হবে। সব নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানই বিপন্ন হবে।’

তিনি নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন, একে শক্তিশালী করা এবং অর্থ ও অস্ত্রের হাত থেকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবি জানান। এ জন্য তিনি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের অর্থবহ সংলাপের প্রস্তাব করেন।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী মুক্তবাজার অর্থনীতির নব্য উদারবাদী দর্শন থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। সমতার কথা বলেছেন কিন্তু সেটা আমি খুঁজে পাইনি। অর্থনৈতিক সমিতির সমীক্ষা অনুসারে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৫৫ লাখ। এত সংখ্যক দরিদ্র মানুষ রেখে সমতাভিত্তিক সমাজ কিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে?’

মেনন বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির সঙ্গে আয় বৈষম্য বাড়ছে। রাজস্ব আদায়ের হিসাবে দেখলাম, সাধারণ মানুষ ছাড় পায়নি। প্রত্যক্ষ করের চাইতে পরোক্ষ করের পরিমাণ বেশি। ৩৬ ভাগ প্রত্যক্ষ কর বাকি অংশ পরোক্ষ কর। যার পুরোটাই সাধারণ মানুষের ওপর চাপবে। করের পরিধি না বাড়িয়ে যারা কর দিচ্ছে তাদের ওপরই কর চাপানো হচ্ছে।’

মঙ্গলবার বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় আরও অংশ নেন মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল, ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ।


পিএইচসি/এজে