যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে

যুক্তরাজ্য ও ইইউ পতাকাযুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে গেলে বাংলাদেশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। কারণ এর ফলে বাণিজ্য, অথনৈতিক সহায়তা এবং পরিবহন ব্যবস্থার ওপর প্রভাব পড়বে। বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন করে আলোচনায় বসতে হবে।
যুক্তরাজ্য ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে থাকবে কিনা তা নিয়ে বৃহস্পতিবার গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব অত্যন্ত নিবিড়ভাবে এ গণভোট পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ ব্রিটিশ জনগণ যদি ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় তবে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব ফেলবে।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, ‘যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে বাংলাদেশের ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
ইউরোপের ২৮টি দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)।
দূতাবাসের ওই কূটনীতিক বলেন, ‘গত মে মাসে জাপানে জি-৭ এর আউটরিচ প্রোগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে হাসিনা ক্যামেরনকে বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকাটাই যুক্তরাজ্যের জন্য লাভজনক হবে। নিজেদের স্বার্থেই যুক্তরাজ্য ইইউতে থাকবে।’

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য যদি ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা করতে হবে।’

২০১৩-১৪ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ২.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ এবং এটি বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ।

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি কোন পক্ষকে সমর্থন দিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বলা খুবই শক্ত। তবে যুক্তরাজ্যে রেস্টুরেন্ট শিল্পের মালিকরা, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি, তারা ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে।’

তিনি বলেন, ‘রেস্টুরেন্ট শিল্পের মালিকরা মনে করছেন, যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হয়ে গেলে বর্তমানের অভিবাসন নিয়ম শিথিল হবে এবং তারা বাংলাদেশ থেকে বেশি লোক নিতে পারবেন।’

তবে তাদের এ ধারনা ঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন। কারণ অভিবাসন নীতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং অভ্যন্তরীণ মূল রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত।

সাম্প্রতিক এক তথ্যে দেখা গেছে- যুক্তরাজে প্রায় ১০ হাজার কারি রেস্টুরেন্ট চালু আছে। প্রায় এক লাখ লোক সেখানে কাজ করে। প্রতিবছর এর ব্যবসার পরিমান প্রায় ৪.২ বিলিয়ন পাউন্ড।

এদিকে লন্ডনভিত্তিক ডেইলি মেইলের এক রিপোর্টে বলা হয়, রেস্টুরেন্ট মালিকরা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পাশা খন্দকার দাবি করেছেন, নতুন লোক আনতে না পারার কারণে প্রতি সপ্তাহে পাঁচটি করে রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

বর্তমান ইইউ অভিবাসন নীতি অনুযায়ী ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরের কাউকে চাকরি দেওয়ার নিয়ম অনেক কঠিন করা হয়েছে।

জেনেভায় বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার মতো দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত যদি যুক্তরাজ্য নিয়ে নেয়, তবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অধীনে যুক্তরাজ্য যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সবগুলো অকার্যকর হযে যাবে।’

উদাহারন হিসাবে তিনি বলেন, ‘স্বাল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং সদস্য হওয়ার কারণে যুক্তরাজ্য এটি পালন করছে। কিন্তু যদি যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হয়ে যায়, তবে এ সিদ্ধান্ত তার জন্য বলবৎ থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘ইইউ থেকে বের হয়ে গেলে যুক্তরাজ্যকে ঘোষণা দিতে হবে দেশটি আগের দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাণিজ্য সুবিধার বিষয়টি মীমাংসা করতে হবে। বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা সাহায্য সহযোগিতা, অর্থনৈতিক লেনদেন ও পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে।’

বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী লন্ডনে সরাসরি পণ্য পাঠায় এবং সেখান থেকে ইউরোপের অন্য দেশে পাঠানো হয়।

দেবপ্রিয় বলেন, ‘পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে, কারণ ইইউ থেকে বের হয়ে গেলে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কী ধরনের হবে তার ওপর গোটা বিষয়টি নির্ভর করছে।’


এসএসজেড/এজে