যেভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রবিউল ও সালাহউদ্দিন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থানরাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের একজন হলেন ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম, আরেকজন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান। প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা কিভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন। তারা কী সতর্ক ছিলেন না?
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিবেদক জানান, রাত তখন সাড়ে দশটার একটু বেশি। পুলিশের একটি দল আর্টিজানের কাছাকাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এই দলে ছিলেন রবিউল করিম, সালাহউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, একটা হ্যান্ড মাইক নিয়ে পুলিশের ওই দলটি আর্টিজানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে একজন কর্মকর্তা মাইকে বলছিলেন, ভেতরে কে কে আছেন, বেরিয়ে আসুন। মাইকে একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বোমা বিস্ফোরণ আর গুলি বর্ষণ। আচমকা গুলি বর্ষণ ও বোমা হামলায় পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। তাদের একজন সালাহউদ্দিন খান, অপরজন রবিউল করিম। কয়েকজন ভয় পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে পিছু হটেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বোমা বিস্ফোরণের পর সালাহউদ্দিন কয়েক পা হেঁটে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ভয়ে কোনও পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধরতে যাননি। বেশকিছুক্ষণ তিনি পড়েছিলেন রাস্তার ওপর। পরে পুলিশের একটি গাড়ি এসে উদ্ধার করে সালাহউদ্দিন ও রবিউলকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা।
জানা যায়, পুলিশের ওই টিমে যারা ছিলেন কমবেশি তারা সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। আর্টিজানের কাছে যাওয়ার সময় তারা খুব একটা সতর্ক ছিলেন না। তারা এটাকে মামুলি একটা বিষয় মনে করেছিলেন। যার ফলে তাদের বড় খেসারত দিতে হয়।

রবিউল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এমন খবর পেয়ে তার আত্মীয় স্বজন সাভার থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে যান। স্বজনদের মধ্যে ছিলেন রবিউলের মামা, তার স্ত্রী এবং সাত বছরের এক শিশু। সাভার থেকে রওনা হওয়ার পরে পথে তারা জানতে পারেন রবিউল মারা গেছেন।

রবিউলের মামা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, রবিউলের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তাদের ৭ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে।

রবিউল বিসিএস ৩০তম ব্যাচের একজন কর্ককর্তা। গোয়েন্দা পুলিশের মহানগর উত্তরের মাদকবিরোধী টিমে কাজ করতেন তিনি। পরিবার নিয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে থাকতেন।

হামলার পর আর্টিজান বেকারির কর্মী সুমন জানান, ভেতরে ২০ জনের মতো বিদেশিসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জনের মতো জিম্মি রয়েছেন। তিনি বলেন, তাদের রেস্তোরাঁয় মূলত বিদেশি নাগরিক ও দেশি বিত্তবান ব্যক্তিরাই আসেন।

হামলায় পুলিশসহ অন্তত ৫০ জনের বেশি লোক আহত হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পুলিশের আইজি শহীদুল হক, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে এবং ঘটনাস্থলের আশপাশে থেকে পরিস্থিতি তদারকি করছেন।

ভোর পাঁচটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যৌথ বাহিনী ওই রেস্টুরেন্টের বাইরে অবস্থান নিয়ে আছে। গণমাধ্যম কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেতরে কী হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না।

এমএসএম/এজে