অভিভাবকদের বরাত দিয়ে নিখোঁজ হওয়া কুড়িজনের নাম ঠিকানা দুই দফায় প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এই কুড়িজন আসলে কোথায় গেছে, কী করছে, তার সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আর এ কারণেই এই নিখোঁজদের নিয়ে অভিভাবক এমন কি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এখন যত টেনশন।
তবে তাদের ব্যাপারে সঠিক তথ্য না মিললেও বিভিন্ন সময় ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে কয়েকজনের আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে স্পষ্ট হওয়া গেছে।
দ্বিতীয় দফায় নিখোঁজ হিসেবে সামনে আসা দশজনের মধ্যে তিনজন নারীও আছেন। এরা কোনপথে যোগাযোগ করেছেন বা আদৌ তারা জঙ্গি হিসেবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সম্পন্ন করতে পেরেছেন কিনা, তা জানা না গেলেও র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানান, ‘আপনারা জানেন যে ইতোমধ্যে আমরা কিছু মিসিং ইয়ংদের খবর পেয়েছি, যারা দীর্ঘদিন ধরে মিসিং ছিল। কেউ কেউ ইতোমধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে জঙ্গি হিসেবে।’ এদিকে নিখোঁজদের অনেকের জীবন ইতিহাস ঘাটলে তাদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার বিষয়টিই বারবার উঠে আসছে।
গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর ১০ যুবকের সন্ধান পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চায় তাদের পরিবার। এরপর গতকাল রবিবার আরও দশজনের তালিকা গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এই দশজনের মধ্যে তিনজন নারী রয়েছেন। এদের একজন রমিতা রোকন। কুড়িবছরের রমিতার ফেসবুক পেজে শেষ পোস্টটি গতবছর জুলাই মাসের।
গুলশানে হামলাকারীদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর অভিভাবকরা জানতে পারেন, হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তাদের সন্তানেরা কোন পথে গিয়েছিল। এবং এইসব ক্ষেত্রে নিখোঁজ হিসেবে সাধারণ ডায়েরি করেও কোনও ফল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন অভিভাবকরা। অভিভাবকরা সন্তানদের বদলে যাওয়া বুঝতে না পারলেও নিবরাস ও রোহানদের বন্ধুরা জানিয়েছিলেন কীভাবে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে চলাফেরার কারণে বদলে যেতে থাকেন তারা।
কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেওয়া নিখোঁজ সংবাদই নয়, দেশের বেশকিছু জেলায় নিখোঁজ হওয়ার আরও খবর মিলছে। এরমধ্যে কেবল নাটোরে গত ছয় মাসে ২৪ জনসহ ২৮ তরুণ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যাদের অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ২১ বছর। নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী বলছেন, শনিবার পর্যন্ত পুলিশ নাটোর জেলায় ৪৪ জন তরুণ নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৮ জনের সন্ধান চেয়ে জিডি করেছেন স্বজনরা। জিডি হওয়া তরুণদের মধ্যে ২৪ জন চলতি বছর এবং ৪ জন গত বছর নিখোঁজ হয়।
স্বজনরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে না জানালেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বিভিন্ন সময়ে আরও অন্তত ১৩ জন এভাবে রহস্যজনক নিখোঁজ রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা সোহান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র জিলানী।এমনকি ঢাকার খিলগাঁওয়ের একজন চিকিৎসক সপরিবারে দেশ ছেড়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, তারা সবাই গত কয়েক বছরে উগ্র মতাদর্শের শিকার হয়ে ইরাক বা সিরিয়া গেছে।
গোয়েন্দাদের এই দাবির সত্যতা মেলে নিখোঁজ হওয়া ২৮ বছর বয়সী নৌ-প্রকৌশলী নজিবুল্লাহর ফেসবুক বার্তায়। যেখানে তিনি তার ভাইকে লিখেছেন ‘আইএস, ইরাকে গেলাম’। চট্টগ্রামে বড় হওয়া নজিবুল্লাহর জন্ম ১৯৮৭ সালে। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে পড়তে যায় মালয়েশিয়া মেরিন একাডেমিতে। ২০১২ সালে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জাহাজে চাকরি নেয়। গতবছর জানুয়ারিতে ভাইকে ওই এসএমএস করার পর আর কোনও যোগাযোগ হয়নি।
এই বদল আরও শঙ্কায় ফেলে যখন ১০ জনের ওই তালিকায় থাকা মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ও জাকির ছবি দেখে তাকে নিজের ছেলে সজিত দেবনাথ বলে শনাক্ত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামের জনার্দন দেবনাথ।তিনি জানান, জাপানে পড়তে গিয়ে ছেলে সেখানেই থেকে যায়। তবে গত এক বছরের ভেতরে তাদের কোনও যোগাযোগ হয়নি।
বাসারুজ্জামানের বেলায়ও মালয়েশিয়ায় যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার মামা আবুল কাসেম। তিনি বলেন, বাসারুজ্জামান দুই বছর আগে একটি বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে বলেছিল। তবে গত সাত মাস আগে তার ভাগ্নে দুই মাসের জন্য অফিসের কাজে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজদের বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এদের প্রত্যেকের নামে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টা গুরুত্ব না দেওয়ায় এটা এখন বড় রূপ ধারণ করেছে। ঠিক কতজন এভাবে কোথায় চলে গেছে এবং আবারও কোথাও প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছে কিনা তা আমরা কিছুই জানি না। বিষয়টা খুবই শঙ্কার।
এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে নিখোঁজ ১০ জনের খোঁজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
ঝিনাইদহে শিক্ষার্থী-ইমামসহ ১০ জন নিখোঁজ
চট্টগ্রামে নিখোঁজ ৫ কিশোর-তরুণ
জঙ্গিদের অনেক সহযোগী, আস্তানাও অনেক