একটি ক্যামেরা কিনতে জার্মানি যাচ্ছেন সরকারের তিন কর্মকর্তা

কোলাজ ছবিপ্রধানমন্ত্রীর কর্মকাণ্ড কাভারেজের জন্য একটি ডিজিটাল ক্যামেরা কিনতে জার্মানি যাচ্ছেন সরকারের উচ্চ পদস্থ তিন কর্মকর্তা। তবে এই কর্মকর্তাদের ক্যামেরা সম্পর্কে একেবারেই কোনও অভিজ্ঞতা নেই। তাছাড়া বিদেশ থেকে এ ধরনের কোনও সরঞ্জাম কেনার অভিজ্ঞতাও তাদের নেই।
গত ১৪ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশও করা হয়েছে।
সরকারের ওই তিন কর্মকর্তা হলেন- তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (প্রেস) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের (ডিএফপি) মহাপরিচালক মোহাম্মদ লিয়াকত আলী খান ও একই অধিদফতরের উপ-পরিচালক ও সম্পাদক মুহা. শিপলু জামান।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব নিলুফার নাজনীন স্বাক্ষরিত জারি সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কর্মকাণ্ড কাভারেজের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এক সেট ডিজিটাল ক্যামেরা ও কিছু সরঞ্জামাদি আমদানির লক্ষ্যে প্রি শিপমেন্ট ইন্সপেকশন করার লক্ষ্যে উল্লেখিত কর্মকর্তাগন জার্মানী সফর করবেন। তারা আগামী ২৫ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত এই ৭ দিন জার্মানিতে অবস্থান করবেন। এই কাজে অংশগ্রহণের জন্য যাবতীয় ব্যয়ভার আয়োজক সংস্থা বহন করবে।
তবে জানা গেছে, আয়োজক সংস্থা ব্যয়ভার বহন করলেও ওই ব্যয় ধরেই তারা দরপত্র দিয়েছে। অর্থাৎ ওই তিন কর্মকর্তার বিদেশ সফরে সরকারের কোনও টাকা খরচ হচ্ছে না বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা অসত্য। 

তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভ্রমনকালে তারা দরপত্রে উল্লেখিত ক্যামেরা প্রস্তুতকারী কারখানা পরিদর্শন করবেন এবং এসব ক্যামেরা ও সরঞ্জামাদি পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। শেষে দেশে ফিরে প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। প্রতিবেদন অনুকূলে থাকলেই ওই কোম্পানির ক্যামেরা বা সরঞ্জামাদি কেনা হবে না হলে নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তথ্য মন্ত্রণালয়ের যে তিন কর্মকর্তা ক্যামেরা কেনার জন্য জার্মানি যাচ্ছেন তারা কেউই ক্যামেরা বিশেষজ্ঞ নন। এ সব যন্ত্রপাতির দাম বা মান সম্পর্কে কারোরই কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এর আগে তারা কেউই এ ধরণের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য কখনোই বিদেশ সফর করেননি। তার পরেও সরকারি অর্থ ব্যয় করে এই তিন কর্মকর্তা বিদেশ যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিনিধিদলের সদস্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘আমি কখনোই কোনও ক্যামেরা বা কোনও সরঞ্জামাদি কিনতে বিদেশে যাইনি। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। জার্মানিতে গিয়ে কী কাজ করতে হবে তা আমি এখনও পর্যন্ত জানি না। তবে কাল শুক্রবার সংশ্লিষ্ট অন্য দুজন সফরসঙ্গীর সঙ্গে এ বিষয়ে করণীয় জানতে বসবো।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে কোম্পানির ক্যামেরা কেনা হবে তা নিশ্চয়ই বাংলাদেশেও পাওয়া যায়।’

এ বিষয়ে সরকারি আদেশ জারি করা তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নিলুফার নাজনীন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে কেন এতো আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে এটি আমার বোধগম্য নয়। অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। অতীতেও তো এ ধরণের ক্যামেরা কেনার জন্য কর্মকর্তারা বিদেশে গেছেন, তখন তো এতো আলাচেনা সমালোচনা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এস এম মাহবুবুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ক্যামেরা বা সরঞ্জামাদি কেনার জন্য কর্মকর্তাদের দেশের বাইরে যাওয়া নতুন কোনও ঘটনা নয়। এটি দরপত্রের একটি শর্ত। যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কেনা হচ্ছে। ওই দরপত্রে এ ধরণের শর্ত ছিল বলেই তিন কর্মকর্তা জার্মানি যাচ্ছেন। যদিও এর ব্যয়ভার দরদাতা প্রতিষ্ঠানই বহন করবে।
তবে তিনি এও বলেছেন, সফরের ব্যয় যেহেতু দরদাতা প্রতিষ্ঠান বহন করবে, নিশ্চয়ই তারা ওই খরচসহ দর দাখিল করেছেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেউই বিশেষজ্ঞ নন। তবে ক্যামেরা এবং সরঞ্জামাদিগুলো ব্যবহার করবে ডিএফপি কর্তৃপক্ষ। সেহেতু ডিএফপির মহাপরিচালকসহ দু’জন কর্মকর্তাকে এই টিমে সংযুক্ত করা হয়েছে।’

তথ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশ

/এসআই/এজে/