রাজধানীর উত্তর বাসাবোর ১৫৭/২ নম্বর বাসা থেকে দুই ভাই-বোনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে 'ষড়ঋতু' নামের একটি ছয়তলা ভবনের চিলেকোঠায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত হুমায়রা বিনতে মাহবুব তাকিয়া (৬) ও মাশরাফি ইবনে মাহবুব আবরারের (৭) বাবা মাহবুব রহমান ওয়াসায় চাকরি করেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস ফকির বাংলা ট্রিবিউনকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। কারা, কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। আমরা কাজ করছি।’
তবে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, দুই শিশুকে তাদের মা হত্যা করেছে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন।
ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মো. মারুফ হাসান বলেন, পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থলে ডিবি, র্যাব, ডিবির ক্রাইম সিন দল উপস্থিত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একটি লাশ বেডরুমের বিছানায়, অন্যটি পাশের রুমে ছিল।
তিনি বলেন, বাসা থেকে একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। হয়তো এটা দিয়ে হত্যাকারীরা তাদের হত্যা করতে পারে, আবার নাও করতে পারে। এ বিষয়ে এখনও উপসংহারে আসতে পরিনি।
শিশুদের মা মানসিক রোগী কিনা? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব রহমান বলেন, তাকে আটক করার পর তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বিষয়টি জানা যাবে।
তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ক্রাইম সিন আলামত সংগ্রহের জন্য রয়েছে।
জানা যায়, গত আটমাস ধরে তারা ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন। বাড়িটি একবছর আগে তৈরি হয়েছে।
শিশুদের মা কি ধরণের সমস্যায় ভুগছিলেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে লাইলা নূর বলেন, তিনি সাধারণত চুপচাপ থাকতেন, কারও সঙ্গে কোনও কথা বলতেন না। সন্তান বা স্বামীর প্রতি কোনও খেয়াল রাখতেন না। তবে যখন ওষুধ দেওয়া হতো তখন তিনি ভাল থাকতেন। আর যখন ভাল থাকতেন তখন সমস্যা জানতে চাইলে বলতেন, তিনি (শিশুদের মা) স্বপ্নে তার দুই সন্তানকে মেরে ফেলেছেন বা তার বাবা মা (শিশুদের নানা-নানী) তাকে মেরে ফেলেছে। অথবা তিনি তার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। এসব স্বপ্ন দেখে তিনি দুঃশ্চিন্তা করতেন।
তিনি আরও বলেন, গত ৩ জুন তারা সপরিবারে নারায়ণগঞ্জের আমাদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। আমাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদ নগরে। গত ঈদের তারা সেখানে গিয়েছিল।
লাইলা নূর বলেন, নিহত শিশুদের বাবা মাহবুব রহমান দুপুরে কোরবানির বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমরা তিন ভাই-বোন সবসময় এক সঙ্গে কোরবানি দিয়ে থাকি। তখন সে বলেছিল তারা সবাই ভাল আছে। এরপর রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমার ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান ফোনে জানায়, তাকিয়া ও আবরার আর বেঁচে নেই। তারপর আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে এখানে ছুটে আসি।
তিনি আরও বলেন, খিলগাঁওয়ের বাগিচা এলাকায় নিহত শিশুদের নানার বাড়ি। তাদের নানা বেঁচে নেই। নানি, মামা ও খালারা সেখানে থাকেন। তাদের বাড়িও কুমিল্লার দেবিদাড়ে।
তিনি বলেন, আবরার গত এক বছর ধরে স্থানীয় একটি মাদ্রায় পড়াশুনা করতো। মেয়েটাও কিছুদিন আগে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়।
/এআরআর/এআরএল/এসএনএইচ/
আরও পড়ুন: