খাগড়াগড় মামলার বিচার শুরু আজ

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ

বহুল আলোচিত খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার বিচারকাজ আজ ১৯ আগস্ট, শুক্রবার কলকাতায় শুরু হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মাটিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার চক্রান্ত সংক্রান্ত এ মামলার শুনানি আগামীকাল শনিবারও চলবে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, মামলার বিচারকাজ শুরু হবে কলকাতার সিটি সেশনস কোর্টের মুখ্য বিচারক শুভ্রা ঘোষের এজলাসে। ব্যাঙ্কশাল কোর্ট লাগোয়া বিচার ভবনের ওই আদালতই কলকাতায় ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র বিশেষ আদালত। এনআইএ ২০১৪-র অক্টোবরে এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে।

ওই বছরের ২ অক্টোবর দুপুরে বর্ধমান জেলা সদরের অদূরে খাগড়াগড়ে একটি দোতলা বাড়িতে বিস্ফোরণে দু’জন নিহত ও একজন গুরুতর আহত হন। নিহতদের অন্যতম শাকিল গাজী বাংলাদেশের নাগরিক।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঘটনাস্থলটি ছিল জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর আস্তানা। এখানে বিস্ফোরক ও বোমা তৈরি করত দুষ্কৃতকারী জঙ্গিরা। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ঝাড়খণ্ডে জেএমবি যে গভীরভাবে সন্ত্রাসী-জাল বিছিয়েছে, সেটা ওই বিস্ফোরণ মামলার তদন্তের সূত্রেই প্রকাশ পায়।

আদালত সূত্রের খবর, খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হওয়ার পর ওই ঘটনার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বর্ধমান থানার তদানীন্তন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার আবদুল গাফফার। এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামিদের উপস্থিতিতে আজ সাক্ষ্য দেবেন তিনি। তার সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যে দিয়েই মামলার বিচার শুরু হবে। ওই থানারই আরেক পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার প্রথম তদন্তকারী অফিসার। শনিবার একই আদালতে তারও সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে দুই মহিলাসহ ২০ জনকে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন। এরা হচ্ছেন শেখ রহমতুল্লা, তরিকুল ও নইম। চার্জশিট দেওয়া হয়েছে আরও চার বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে। তবে এই চারজন—হাতকাটা নাসিরুল্লা ওরফে সোহেল, বোমা মিজান ওরফে কাওসর, তালহা শেখ ওরফে শ্যামল ও সইদুর রহমান এখনও ধরা পড়েনি।

২০১৫-র মার্চে এনআইএ ওই মামলায় তাদের প্রথম চার্জশিটে উল্লেখ করে, পর পর বড় মাপের নাশকতা ঘটিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার উদ্দেশে পশ্চিমবঙ্গের মাটিকে ব্যবহার করে প্রস্তুতি নিচ্ছিল সন্ত্রাসীরা।

উল্লেখ্য, ভারত এর আগে বহুবার অন্য দেশে বসে তাদের দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ করলেও মামলার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র তুলে ধরার ঘটনা এটিই প্রথম।

প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার দ্বিতীয় অতিরিক্ত চার্জশিটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৫ নম্বর ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এশিয়ায় ভারতের কোনও বন্ধুরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা যুদ্ধ করার অভিযোগে আইনের ওই ধারা প্রয়োগ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বন্ধুরাষ্ট্র বলতে বাংলাদেশকেই বোঝাচ্ছে। আজ পর্যন্ত ভারতে রুজু হওয়া সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৫ নম্বর ধারা প্রয়োগ বিরল।

/টিএন/

আরও পড়ুন: মানবতাবিরোধী অপরাধ নয়, কিস্তি না দেওয়ায় সাঈদীর প্লট বাতিল