বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যই গুলশানে হামলা করা হয়েছে: কেরি

বৈঠকে শেখ হাসিনা ও জন কেরিবাংলাদেশকে বিশ্বের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যই গুলশানে হামলা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি আইএসআই-এর নেটওয়ার্ক দক্ষিণ এশিয়াতে আছে। তারা দেশীয় সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।’ সোমবার ঢাকার ইএমকে সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কেরি তার বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

জন কেরি বলেন, ‘জুলাই ১-এর ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছ থেকে বিছিন্ন করার জন্যই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে বিদেশিদের যোগাযোগ আছে। সন্ত্রাসীরা দেশীয় মানে এই নয় যে, তাদের সঙ্গে বিদেশিদের যোগাযোগ নেই।’

এ সময় জন কেরি বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় আমরা সবাই একসঙ্গে আছি এবং  যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে আছে।’ এ সময় তিনি গণতন্ত্র ও জনগণের নিরাপত্তার ওপর জোর দেন।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফর বিষয়ে বাংলাদেশের যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল বলে মনে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দু’দেশ ভালো একটি পরিবেশে আলোচনা করেছে। দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর জন্য এ সফরটি জরুরি ছিল। জন কেরির এই সফরের ফলে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যেকার সম্পর্ক আরও বাড়বে।’

হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সবার শরীরী ভাষা অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। এতে বোঝা যায় সহযোগিতার যেসব ক্ষেত্র দু’পক্ষের জন্য প্রযোজ্য সেসব বিষয় আলোচনা হয়েছে।’ তিনি এ সফর সম্পর্কে বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ইতিবাচক ও ভালো সফর এবং এটি আলাপ আলোচনার সুযোগ করে দেয়।’ নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে দীর্ঘদিনের সহযোগিতা আছে এবং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সঠিক প্রস্তুতি দেখে বোঝা যায়, সরকার এ আলোচনায় সন্তুষ্টি বোধ করেছে।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর কোনও সহজ নয়। সবদিক দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রস্ততি ভালো ছিল।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বাংলা ট্রিউিনকে বলেন, ‘নিরাপত্তা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতাকে ইতিবাচক দৃষ্টিবঙ্গিতে দেখা উচিত।’ তিনি মনে করেন, ‘বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বিদেশের সন্ত্রাসীদের একটি যোগাযোগ আছে। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এ ধরনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগের কারণ হবে এটি স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষিত এবং উচ্চবিত্তের সন্তানরা এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। এটি আরও বেশি উদ্বেগের বিষয়।’

সাখাওয়াত বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং এ সময় বাংলাদেশ বিষয়ে নীতির কোনও পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্র করবে না।’ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতার প্রস্তাব বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না তাদের প্রস্তাব কি তবে তাদের কাছে ভাণ্ডার থেকে তথ্য চাইলে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে?’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। আমরা এ বিষয়ে সফল হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতা, বাণিজ্যে সহযোগিতা বা উন্নয়ন সহযোগিতার আগে যেটি সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, সেটি রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন। আমরা সেই জায়গায় কাজ করছি।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ সফরে দু’দেশের নেতৃত্বের মনোভাব ছিল ইতিবাচক। আমরা এ সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছি।’ এই সফরের পরে কী হবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও নেতৃত্ব ধানমণ্ডি ৩২-এ  বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যায়নি। কেরিকে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে নিয়ে যাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে কেরি লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভিশনে বাংলাদেশ এগিযে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার ভিশনের একজন জোরালো সমর্থক।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও  নেতৃত্ব একথা বলেনি।’

সামনের দিনগুলোয় সহযোগিতার ক্ষেত্র কী হবে এবং কিভাবে বাড়বে, এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সহযোগিতার অনেক ক্ষেত্র আছে। যেমন নিরাপত্তা, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি।’ এ সহযোগিতা আগেও ছিল এবং স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চলমান প্রক্রিয়া হিসাবে এর গতি বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

আরও পড়ুন: নির্বাচনের জন্য ফের যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইলো বিএনপি

 /এমএনএইচ/