রিশার আঁকার খাতাটা তেমনি আছে




রিশার আঁকা ছবিরিশা ছবি আঁকতে পছন্দ করতো। গান শুনতে পছন্দ করতো। ছবি তুলতে পছন্দ করতো। রিশার রুমে রয়েছে বড় বড় সাউন্ডবক্স, যেগুলো সে কাউকেই ধরতে দিতো না। ছোট ভাইবোনকে বকা দিতো সাউন্ডবক্স ধরলে। ‘বলতো এগুলো কখনও ধরবি না। ধরলেই মাইর খাবি’ একথাগুলোই বারবার বলছিল সুরাইয়া আক্তার রিশার ছোটবোন তিশা।

আজ মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দীন রোডে অবস্থিত রিশাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসায় স্বজনদের ভিড়। সবাই বার বার বলছেন, রিশার কথা।১৪ বছরের কিশোরী মেয়েটি সবার ভালোবাসার মানুষ ছিল বলছিলেন, তারা।

রিশার পড়ার টেবিলের ওপরে থাকা চারুলতা আর্ট একডেমির একটি খাতা দেখিয়ে বলছিল তিশা।খাতাটির প্রতিটির পাতায় সে হাত বুলাচ্ছিলো, যেন বোনের আঁকা ছবিতে হাত বুলিয়ে বোনের স্পর্শ পাচ্ছিলো সে।বোনের আঁকা ছবি দেখিয়ে সে বলছিল, আপু আঁকতো আর আমি বসে বসে দেখতাম। বলতাম, এখানে এই রঙটা দিলে ভালো লাগবে। আপু প্রথমে সেটি দিতে না চাইলেও পরে আমার বলা রঙগুলোই করতো। খাতাটিতে দেখা গেল, গ্রামের দৃশ্য আঁকতেই বোধহয় বেশি পছন্দ করতো রিশা। নানা রঙ খেলা করছে ছবিগুলোতে যেন রিশার হাতে প্রাণ পেয়েছে ছবির আঁকা মানুষগুলো।

রিশার ঘরে রাখা সাউন্ডবক্সরিশার মামি ইতি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভাইবোনদের ভেতরে খুব মিল ছিল। কিন্তু রিশা মারা যাওয়ার পর ছোট ভাইবোন দুটি চুপ হয়ে গেছে।
তবে রিশা হত্যাকাণ্ডে স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে আবারও সামনে আনলেন রিশার বড় মামা মুন্না। তিনি বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি রিশাকে হাসপাতালে নেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করতো, তাহলে মেয়েটাকে মরতে হতো না।

রিশার ছোটবোন তিশারিশার মা তানিয়া হোসেন মেয়ের শোকে এখনও পাগলপ্রায়। কোনোভাবেই মেয়ের এ অকালমৃত্যুকে মানতে পারছেন না তিনি। কিছু সময় চুপ করে থাকার পর আবারও বুক চাপড়ে কেঁদে ওঠেন।আর বাবা রমজান হোসেন বুকে পাথর বেঁধে আছেন। তিনি বলেন, মেয়েটাকে হারিয়ে বুঝতে পারছি, মেয়েটা আমার কী ছিল।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২৪ আগস্ট) বেলা পৌনে ১২টার দিকে কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনেই একটি টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল খান ছুরিকাঘাত করে রিশাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।এর চারদিন পর রবিবার (২৮ আগস্ট)সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিশা মারা যায়।

/জেএ/এবি/

আরও পড়ুন
রিশার ঘাতক ওবাইদুলের বোন ও ভগ্নিপতি আটক