গুলশানে আতঙ্ক, অবশেষে জানা গেল তারা চোর

গুলশানের ওই ভবনের সামনে পুলিশের অবস্থান

রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরে মঙ্গলবার সকাল থেকে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এক নম্বর গোলচত্বর এলাকায় সকাল থেকেই অনেক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ওই এলাকার একটি ভবন ঘিরে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সকাল সকাল এত পুলিশ দেখে গুলশানবাসী ফের আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাদের মনে একটাই আতঙ্ক উঁকি দিচ্ছিল, আবারও কী কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে চলেছে। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা আর আতঙ্কের অবসান হলো। জানা গেল ঘিরে রাখা ওই ভবনে কয়েকজন চোর ঢুকেছিল। তবে ভবনের ভেতর কাউকে পাওয়া যায়নি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কূটনৈতিক জোনের ডিসি জসিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্রিল কেটে কয়েকজন ওই ভবনের ভেতরে ঢুকেছে খবর পেয়ে পুলিশ ঘেরাও করেছিল। পরে দেখা গেলো চোর চুরি করতে ঢুকেছিল।’

গুলশান ১-এর ৫১ নম্বর ভবন

৫১ নম্বর ওই ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় এলজির শোরুম রয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ইউনিরয়্যাল সিকিউরিটি লি. ও নেক্সিম নামে দুটি সিকিউরিটি কোম্পানির অফিস রয়েছে। ভবনের পেছনের জানালার এবং পাঁচতলার গ্রিলকাটা। ধারণা করা হচ্ছে এখান দিয়েই চোর পালিয়েছে।

র‌্যাব-১ এর উপ- অধিনায়ক মেজর আজম বলেছেন, ‘আমরা খবর পেয়ে সকালে ভবনটির চার ও পাঁচতলায় অভিযান চালাই। ভবনের ভেতর কাউকে পাওয়া যায়নি। পেছনের গ্রিলকাটা।’

ভবনের পেছনের জানালার গ্রিল কাটা

তিনি আরও বলেন, ‘ধারণা করছি তারা পালিয়েছে। একটি সিকিউরিটি কোম্পানির অফিসের কাগজপত্র এলোমেলো পেয়েছি। এছাড়াও দুটি ব্যাগ পেয়েছি, সেগুলোতে তেমন কিছু নেই।’ ভবনের ভেতরে পাওয়া ব্যাগ থেকে ১৭টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে এলজির ১৬টি নতুন সেট পাওয়া গেছে।

এই ঘটনায় ভবনের কেউ জড়িত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মেজর আজম বলেন, ‘এটা তদন্তের বিষয়। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভবনের ভেতরে কোনও সিসি ক্যামের আছে কিনা? তবে ভবনের ভেতন কোনও সিসি ক্যামেরা পাওয়া যায়নি।’

14215439_10205122345137992_1176001834_o

এ অভিযান প্রসঙ্গে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তাই যখন খবর পাই চার পাঁচজন সন্ত্রাসী ভবনের ভেতরে আছে তখন আমরা বিলম্ব না করে অভিযান চালাই।’

ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার শাহবুদ্দিন কোরেশি বলেন, ‘কয়েকজন দুর্বৃত্ত এই ভবনে ঢুকেছিল বলে আমরা খবর পেয়ে পুলিশ পাঠাই। পুলিশে এসে পুরো ভবন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং তল্লাশি চালায়। কিন্তু ভবনের ভেতরে কাউকে পাওয়া যায়নি।’ তবে ভবনের পঞ্চম তলায় দুটি  ব্যাগ ও একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান।

14203488_10205122089371598_1187139248_o

তিনি আরও বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনে হচ্ছে এটা একটা চুরির ঘটনা হতে পারে। কিন্তু পুলিশ আসার আগে দুর্বৃত্তরা জানালার গ্রিল কেটে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আরও কিছু খোয়া গেছে কিনা তা নিশ্চিত নই। তবে জিনিসপত্র এলোমেলো আছে। অফিসের লোকজন আসলে জানা যাবে আরও কিছু খোয়া গেছে কিনা।’

পুলিশ ধারণা করছে, ভবনটির পাশের নির্মাণাধীন ভবন থেকে তারা উঠছিল।

IMG_5950

ভবনের নিচে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তারক্ষী সবুর মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকাল ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে বুথ ঝাড়ু দেওয়ার সময় ভবনের নিচের কেচি (কলাপসিবল) গেটে শব্দ পেয়ে বের হয়ে দেখি একজন তালা কাটার চেষ্টা করছে। আমি তাকে বলি আপনি তালা কাটছেন কেন? চাবি নেই আপনার কাছে? সে আমার কথা শুনে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে যায়।’ এরপর তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ দ্রুত ওই ভবন ঘিরে ফেলে। ভবনটির পেছনের দুটি লোহার এবং সামনের দুটি কলাপসিবল গেট রয়েছে।

IMG_5942

ভবনের মালিকের লোক বুলুর বরাত দিয়ে সবুর জানান, বুলু ওপরে আরও তিনজনকে দেখছে। তারা বুলুকে চিল্লাচিল্লি করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে এলজি শোরুমে তিন থেকে চারজন ব্যক্তি ঢুকে পড়ে। পরে ওই শোরুমের সিকিউরিটির লোকজন তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেন।

 /জেইউ/এআরআর/এনএল/এসটি/