দুর্দিন কেটে গেছে, বাংলাদেশের মানুষ আর না খেয়ে মারা যাবে না বলে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দারিদ্র্য ও ক্ষুধায় কেউ কষ্ট পাবে না। বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ। বুধবার কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখার সময় তিনি এ প্রত্যয় ঘোষণা করেন।
চিলমারী থানাহাট এ ইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বুধবার দুপুরে আয়োজিত জনসভায় ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একটা মানুষও আর না খেয়ে থাকছে না। কষ্ট পাবে না। গৃহহারা থাকবে না। রাজনীতি করি নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য নয়, মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার প্রতিজ্ঞা ছিল বৃহত্তর রংপুরবাসী মঙ্গা শব্দটা আর কানে শুনতে না হয়। আমরা এ ক্ষেত্রে সফল হয়েছি। কেউ আর এ অঞ্চলকে মঙ্গার এলাকা বলবে না। এ অঞ্চলে মঙ্গা হবে না, দুর্ভিক্ষ হবে না, না খেয়ে আর কেউ কষ্ট পাবে না। সে লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ১০ টাকার চাল সাড়ে তিন টাকা দরে নামিয়ে এনেছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলার সেই স্বপ্ন কেড়ে নেওয়া হয়। পরবর্তী সরকার সেই কাজ আর বাস্তবায়ন করেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এরপর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিজের চোখে দেখেছি। তখনই আমি শপথ নেই যদি কখনও ক্ষমতায় যেতে পারি, এদেশের একজন মানুষও না খেয়ে মরবে না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা সে প্রতিশ্রুতি পূরণে অনেকদূর এগিয়েছিলাম। এবার আমরা শপথ নিয়েছি এদেশের একটা মানুষও আর না খেয়ে মরবে না। আমি চাই না এদেশের মানুষের মধ্যে ‘দুস্থ’ শব্দটা থাকুক। এ সময় তিনি বলেন, আমার প্রতিজ্ঞা ছিল বৃহত্তর রংপুরবাসীকে মঙ্গা শব্দটা যেন আর কানে শুনতে না হয়। আমরা এ ক্ষেত্রে সফল হয়েছি। কেউ আর এ অঞ্চলকে মঙ্গার এলাকা বলবে না। এ অঞ্চলে মঙ্গা হবে না, দুর্ভিক্ষ হবে না, না খেয়ে আর কেউ কষ্ট পাবে না। সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
কুড়িগ্রামে ট্রেন সংযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুড়িগ্রামের চিলমারী নদীবন্দর ছিল নদীর খনন কাজ করে যে বন্দর ছিল তার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, পৃথিবীতে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যেখানে ১০ ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গি হামলা দমন করেছি এবং জিম্মিদের উদ্ধার করেছি।পৃথিবীতে আর কোনও দেশ এত তাড়াতাড়ি এটা করতে পারেনি।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলায় অভিভাবক শিক্ষক ও পাড়া প্রতিবেশীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের সন্তানরা কোথায় যায়, কী করে, তা খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে একমাস শিক্ষাঙ্গনে অনুপস্থিত থাকলে তার খোঁজখবর নিতে হবে।
সভাস্থলে ফাতেমা বেগম নামে সুবিধাভোগী এক নারীর হাতে কার্ড ও চাল তুলে দেওয়ার মাধ্যমে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। মোট ১৫ জন সুবিধাভোগী নারী ও পুরুষের হাতে এই কার্ড ও চালের ব্যাগ তুলে দেন তিনি।
এর মাধ্যমে নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত ১০ টাকা দরে চাল দেওয়ার ঘোষণার সফল বাস্তবায়ন ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কর্মসূচির স্লোগান রাখা হয়েছে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার ১০ টাকা কেজিতে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে। প্রতি বছর মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, আক্টোবর, নভেম্বর এই পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় চাল পাবে হতদরিদ্র পরিবারগুলো। এর ফলে সরকারকে প্রতি বছর দুই হাজার একশ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। প্রতি কেজি চাল ৩৭ টাকা দরে কিনে ১০ টাকা দরে হতদরিদ্রদের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতি কেজি চালের ওপর ২৭ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অারও উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সংস্কৃতিমন্ত্রী অাসাদুজ্জামান নূর, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ, অাওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, কুড়িগ্রাম-৪ অাসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য রুহুল অামিন এমপি, জেলা অাওয়ামী লীগের সভাপতি অামিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক জাফর অালী, চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা অাওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত অালী সরকার বীরবিক্রমসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা অাওয়ামী লীগের নেতারা।
/ টিএন/এমএনএইচ/