গত বছরের জানুয়ারি মাসে মোহাম্মাদ মাজহার খান নামের এক পাকিস্তানি কূটনীতিককে জালনোটসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা রিপোর্টে অভিযোগ ছিল, তিনি জাল মুদ্রার ব্যবসা করেন। এছাড়া হিজবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং জামায়াত-শিবিরকে বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজের জন্য অর্থায়ন করেন। মাজহার খানকে গ্রেফতারের পর পাকিস্তান দূতাবাসের তৎকালীন ফার্স্ট সেক্রেটারি সামিনা মেহতাব মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনীতিক মাজহার খানকে প্রত্যাহারের জন্য পাকিস্তান সরকারকে বললে, জানুয়ারি মাসেই তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ওই সময়ে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের কোনও দেশের নাম না বলে জানিয়েছিলেন, ‘ইদ্রিস শেখ একটি বিদেশি রাষ্ট্রের হয়ে গোয়েন্দা কাজ করতো।’
গত বছর পাকিস্তানের আরেক কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে বাংলাদেশ দেশত্যাগ করতে বলা হয়। তাকে এক বছর ধরে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধেও জঙ্গিদের অর্থায়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন জামাআতুল মোজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র আটক সদস্য ইদ্রিস শেখ স্বীকারোক্তিমূলক এক জবানবন্দিতে জানায়, সে ফারিনার কাছ থেকে টাকা পেয়েছে। এরপর ফারিনা আরশাদকে বাংলাদেশ প্রত্যাহার করতে বললে, ডিসেম্বরে তাকে প্রত্যাহার করে নেয় ইসলামাবাদ।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবরার আহমেদ খান নামের একজন পাকিস্তানি কর্মকর্তাকে সন্দেহভাজন গতিবিধির অভিযোগে গুলশান-২ এর ৬৯ নম্বর রোড থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। গুলশান থানায় নেওয়ার পর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পাকিস্তান দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারির কাছে তাকে হস্তান্তর করে পুলিশ।
এ বছরের আগস্ট মাসে হান সন ইক নামে উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের প্রথম সচিবকে চোরাচালানির অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করতে বলা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর কর্মকর্তারা কমলাপুরের অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোতে এক তল্লাশি চালায়। এ সময় একটি কন্টেইনারে তিন কোটি টাকার বেশি মূল্যের সিগারেট ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের সন্ধান পায়। কন্টেইনারটি ঢাকাস্থ উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের প্রথম সচিবের নামে আমদানি করা হয়েছিল। রাজস্ব বোর্ড বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানায়। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং উক্ত কর্মকর্তাকে দেশ ত্যাগের জন্য বলা হয়।
এর আগে গত বছর মার্চে শাহজালাল বিমানবন্দরে সন ইয়ং নামে উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের আরেকজন প্রথম সচিবের কাছ থেকে ২৭ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। তিনি সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। তার কাছ থেকে সোনা উদ্ধার করা হলেও ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে প্রত্যাহারের জন্য দূতাবাসকে বললে, প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি দেশ এ ধরনের ঘটনা করেছে। পাকিস্তান এ কাজগুলো কূটনীতিকদের দিয়ে না করিয়ে, পুলিশ বা অন্য এজেন্সির লোক দিয়ে করিয়ে থাকে।’ তিনি বলেন,‘আমার দীর্ঘ কূটনৈতিক জীবনে এ ধরনের ঘটনা আমি খুব কমই দেখেছি। এটি অত্যন্ত দুর্লভ বিষয়। পাকিস্তান সার্ক ও ওআইসি’র সদস্য এবং বাংলাদেশে তাদের এ ধরনের কার্যকলাপ গ্রহণযোগ্য নয়।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ থাকলে এক দেশ বিভিন্নভাবে আরেক দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করে এবং পাকিস্তান সে কাজ করছে।’
মুক্তিযোদ্ধা এ কূটনীতিক বলেন, ‘এ ধরনের কার্যক্রম দেশকে দুর্বল করার প্রয়াস মাত্র। এটি আমাদের রোধ করতে হবে এবং গোয়েন্দাদের সজাগ থাকতে হবে।’
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের কূটনীতিকরা শিষ্টাচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না দেশিঠি। বরং তারা পাকিস্তানে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের হয়রানি করে। এর উদাহরণ হচ্ছে, পাকিস্তানি কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করার পর বাংলাদেশি কূটনীতিক মৌসুমি রহমানকে পাকিস্তান থেকে প্রত্যাহার করার জন্য বাংলাদেশকে জানায় ইসলামাবাদ।
/এপিএইচ/এমএনএইচ/