যে কারণে আন্দোলনে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে আন্দোলন১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের কারিকুলাম নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। ২০১৪ সাল থেকে ঢাবির গার্হস্থ্য ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট হোক।  এটা ঘটলে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে নারী পুরুষের বিভেদ থাকবে না বলে মনে করছেন তারা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন,  দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দাবি জানানো হচ্ছে। তবে বহুবার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসের পরেও এক অজানা কারণে এই প্রক্রিয়া থেমে গেছে।

আন্দোলনকারী বস্ত্র-পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে সালমা বেনু বলেন, ‘বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) আমরা কো-এডুকেশনের দাবিতে মাঠে নেমেছিলাম। তবে এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউটের মর্যাদা পাওয়ার পূর্বশর্ত। কো-এডুকেশন চালু হলে স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সহজ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে কলেজটি দুই মায়ের এক সন্তানের মতো অবস্থায় রয়েছে। ঢাবি ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় একই সঙ্গে। কারণ কলেজটি ঢাবির একটি ইউনিট। ঢাবি কর্তৃপক্ষ একাডেমিক কারিকুলাম নির্ধারণ করে, সার্টিফিকেটও দেয়। অথচ অন্যান্য সব প্রশাসনিক কার্যক্রম চলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। তাই আমরা ঢাবি’র বলে স্বীকৃতি পাই না।’

শিক্ষার্থী তারিন সুলতানা বলেন, ‘কলেজটির কোথাও বলা নেই এটা মহিলা কলেজ। অথচ এখানে শুধু ছাত্রীদেরই ভর্তি করা হয়। কিন্তু এসব বিভাগে দেশের বাইরে ছেলেরাও পড়ে। এছাড়া শিশু বিকাশ, বস্ত্র-পরিচ্ছন্ন, পুষ্টি বিজ্ঞানও তো ছেলেরা পড়ে। যেখানে নারী-পুরুষ সমান অধিকার বলা হচ্ছে তাহলে কেন এটাকে কেবল নারীদের বিষয় বলা হচ্ছে?’

তিনি আরও বলেন, ‘কথায় কথায় সবাই বলে, আমরা নাকি কেবল রান্না-বান্না করি। আমার নাকি কেবল ঘর গোছানোর কাজ করি। কিন্তু আমরা তো তা করি না। আমরা আরও বেশি কিছু পড়ি, বেশি কিছু জানি। কিন্তু স্বীকৃতি নেই।’

আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী উম্মে সালমা বেনু বলেন, ‘আমাদের যেমন বিভাগ আলাদা কারিকুলাম আলাদা, কিন্তু ক্যামেস্ট্রি, গণিত, পরিসংখ্যানসহ অন্যসব মাইনর কোর্সগুলো পড়ানো হয় উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের। উচ্চ মাধ্যমিকের বই পড়ানোর কারণেই আমাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়।’

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ শামসুন নাহার বলেন, ‘এখানে যারা পড়ে তারা তো সবাই ঢাবি’র শিক্ষার্থীদের মতোই মেধাবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা হয়। বেশিরভাগ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাই এখানে ভর্তি হয়। আমাদের মেয়েদের আন্দোলন যৌক্তিক। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দোটানার মধ্যে আছে কলেজটি। আমরা কোর্স কারিকুলাম রেডি করি, সেটি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করে ঢাবি। তবে আচরণ অন্যসব সাধারণ কলেজের মতো। এখানে আমাদের অবস্থানও দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষার্থীদর যুক্তির জায়গাকে আমরা সমোলাচনা করতে পারছি না। আবার আমরা সরকারি কর্মকর্তা, ফলে সরকারকে স্বাধীনভাবে কিছু বলতেও পারি না।’

হোম ইকনোমিকস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (হিয়েব) এর সাধারণ সম্পাদক এবং বস্ত্র-পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ফাতিমা সুরাইয়া বলেন, ‘এখানে আমরা যেসব সাবজেক্ট পড়াই তা ছেলেরাও পড়তে পারে। দেশের বাইরেও তাই চালু আছে। তাছাড়া এটা যেহেতু আন্তর্জাতিক মানের সাবজেক্ট তাহলে শুধু মেয়েরা কেন পড়বে? যদি এটা ঢাবির অন্যসব ইনিস্টিটিউটের মতো হয় তাহলে ছেলেরাও ভর্তির সুযোগ পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একসময় ঢাবি’র সমাজকর্ম গবেষণা ইনস্টিটিউট, লেদার টেকনোলজিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আলাদা ছিল। কিন্তু এখন তো ঢাবি নিয়ে নিয়েছে। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজেও এমনটা হতে পারে। সরকার চাইলে সেক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।’

এদিকে মাউশির মহাপরিচলক দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজটি ঢাবি’র একটি ইনস্টিটিউট ও সহ-শিক্ষা চালুর বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ছাত্রীদের কাছে থেকে যে আবেদন পেয়েছি তাতে ইনস্টিটিউট করার দাবির বিষয়ে কিছু লেখা নেই। তারা শুধু কো-এডুকেশন চালুর দাবি করেছে। তবে আগে তারা ইনস্টিটিউট করার দাবি করেছিল। তবে এটি যদি ইনস্টিটিউট হয়ে যায় তাহলে সেখানে ছেলেও পড়ার সুযোগ পাবে।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) কলেজটির প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী কো-এডুকেশন আন্দোলনে নামে। তাদের দাবিটি লিখিত আকারে কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঢাবি উপাচার্যসহ শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিব ও ঢাবি জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিনের কাছে পাঠানোর জন্য অধ্যক্ষের সাক্ষর নিতে যায় আন্দোলনকারীরা। কিন্তু অধ্যক্ষ শামসুন্নাহার স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ে। পরে কলেজের প্রধান ফটকসহ অন্যান্য ফটকে তালা দেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্রীরা। এরপর বাধ্য হয়ে স্বাক্ষর করেন অধ্যক্ষ।

জানা যায়, সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে বস্ত্র-পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে ফিচার করা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত ছবির ক্যাপশনে শিক্ষার্থীর নাম দিয়ে লেখা হয় ‘বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। ফিচার প্রকাশ হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্নমহলে বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন- 

‘আমাদের হাতে নষ্ট করার মতো সময় নেই’
‘জীবিত পাই নাই, লাশটাও ফেরত পাইলাম না’

/আরএআর/এনএস/এফএস/