বাংলাদেশ কোনও কিছুতেই আস্থা হারায় না। অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে সরকার রফতানি বাণিজ্য নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এখন দরকার সেই উদ্যোগগুলোকে বাস্তাবায়ন। রফতানি বাণিজ্য বিষয়ে অনেক ছোট ছোট বিষয় থাকে যেগুলোকে সাবধানতার সাথে ডিঙিয়ে যেতে হয়। রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নতুন বাজার সৃষ্টি এবং পুরোনো বাজারকে ধরে রাখার সক্ষমতা সৃষ্টি।
রফতানি বাণিজ্য ও ভবিষ্যত শীর্ষক বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ শনিবার বৈঠকিতে অংশ নেন রফতানি বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা।
আলোচনায় ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা বলেন, আমাদের একটি ট্রেড পলিসি হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা চারটি সম্ভাবনাময় প্রডাক্ট নিয়ে কাজ করছি। এগুলোর মধ্যে আছে এগ্রো, প্রসেসড ফুড, লেদার, ফার্মাসিটিক্যাল। বর্তমানে এগুলোর সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিশাল বাজারের চাহিদা পূরণ করে সেই স্বাধীনতার পর থেকে আমরা রফতানির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পারছি। আর এতে মূল ভূমিকা পালন করেন ব্যবসায়ীদের। শুরুতে আমরা ২৫টা পণ্য নিয়ে ৬৮ দেশে রফতানি শুরু করলেও এখন ৭৪৪টা দেশে রফতানি করছি।
বিডিজবস.কম এর সিইও আলোচনায় বলেন, সামাজিক অস্থিরতার জন্য শিক্ষিত মানুষদের বেকারত্ব দায়ী। এটা সামাজিক সমস্যার একটা বড় কারণ। ভারতের অবস্থা ২০/২৫ বছর আগে আমাদের মতোই ছিল। কিন্তু তারা নিজেদের চেষ্টা ও পরিকল্পনায় পরিস্থিতি বদলে দিতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষত আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে সম্পৃক্ত করেছে গ্রাজুয়েটদের।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড় করাতে চাইলে একটি জ্বালানি নীতি জরুরি বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, মানুষ না জানলে করণীয় নির্ধারণ করতে পারে না।চট্টগ্রাম বন্দরে যেটা ঘটলো সেটা মানুষের সৃষ্টি। চাইলেও এড়ানো যেত। এগুলো নিয়ে রাজনীতি করলে আমরা সবাই এবং আমাদের দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জুলাইতে হলি আর্টিজানের ঘটনার পর নেটওয়ার্কগুলো কাজ করতে চাইছে না। পণ্য ও নতুন বাজার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে, একই সময়ে যদি আভ্যন্তরীণ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাহলে আমরা আরও বেশি অস্থিরতায় ঢুকে পড়ি। তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি, ব্যবসায় লেগে থাকতে হবে। ক্ষতি স্বীকার করে এগুতে হবে। আর এই পথে বড় সহযোগী হতে পারে সরকার ও ব্যাংক। প্রথমদিকে ক্ষতির সময়টায় যদি ব্যাংক সহায়তা করে তাহলে তারা উঠে আসতে পারে।
বৈঠকিতে ইএবি এর সভাপতি সালাম মুর্শেদী তার আলোচনায় বলেন, আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে নীতি নির্ধারণ করতে হবে। ছোট মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিতে হবে। কারণ তারা এখন অনেক এসেছেন এবং ভাল করছেন। কেবল পোশাক শিল্পেই দুইশ’ নারী উদ্যোক্তা আছেন।
বিশ্বে নতুন বাজার তৈরি ও নতুন পণ্য বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের নতুন বাজার ও পণ্যের বিষয়টা বিবেচনায় নিতে হলে সার্বিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। মনে রাখা জরুরি অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় সবসময়, সেক্ষেত্রে সেটা কীভাবে করা যায় তার পরিকল্পনা থাকতে হবে।
প্রথম আলোর সাংবাদিক শওকত হোসেন মাসুম দুইদফা আলোচনা করেন। তিনি পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাপী রফতানি পণ্য পরিমাণ বাড়ানো ও নতুন বাজার সৃষ্টির বিষয়ে একই ধরনের কথা দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। একেবারেই উন্নতি হয়নি তা নয়। নতুন বাজার যে পরিমাণ ধরার কথা ছিল সে পরিমাণ ধরতে পেরেছি কিনা সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। সল্প উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য দরজা অনেকখানি খোলা, সেটা ব্যবহার করা যাচ্ছে কিনা দেখতে হবে।’
বেশ কিছুদিন আগে গরুর ভুঁড়ি রফতানি পণ্য প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট সবাই অফিসে এসেছেন জানতে আসলে কারা করে, কীভাবে উদ্যোক্তাদের কাছে যাওয়া যাবে। তারা জানতে চায় প্রক্রিয়াটি কি। সবাই মিলে যদি মানুষকে জানাতে পারতাম কোন কোন পণ্যে রফতানি হয়। ঋণের, অর্থায়নের বিষয়টাও সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট হওয়া জরুরি।
আমরা পঞ্চাশ বছরের আগের মেশিন দিয়ে কাজ চালাচ্ছি।একইধরনের পণ্য আমরা তৈরি করে যাচ্ছি। যেখানে ভারতে নব্বইয়ে আধুনিকায়ন করতে এগিয়ে এসেছে সেখানে আমাদের দেশে পাটকলগুলো এক এক করে বন্ধ কর হয়েছে।রফতানি বাণিজ্য ও ভবিষ্যত শীর্ষক বৈঠকিতে ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো রাশেদুল কারিম মুন্না এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নতুন উদ্যোক্তা আসেনি কারণ নীতিমালা অনুপস্থিত ছিল, সহজ ঋণ অনুপস্থিত ছিল। রফতানি নীতিমালাতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আমরা দেখেছি প্রাকৃতিক পণ্যগুলোতে প্রতিবছর প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, গত ১৫বছর ধরে সেটা তৈরি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সারাবিশ্বে ৫শ বিলিয়ন শপিং ব্যাগের মার্কেট আছে। লাইফস্টাইলের অনেক ইস্যুতে পাটকে যুক্ত করা হয়েছে বিশ্বে, আমরা সেখানে আসতে পারিনি।
এজিডাবলিওইবি এর সভাপতি মৌসুমি ইসলাম আলোচনাকালে বলেন, আমরা নতুন পণ্য সামনে আনতে চাইছি কিন্তু আমাদের সুযোগ সুবিধা করে দেওয়ার বিষয়টিতে সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। বিশেষত সেগুলোর ক্ষেত্রে সেগুলোতে সম্ভাবনার জায়গা আছে। চামড়া, মেডিকেল যন্ত্রাদির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে কিন্তু এসবে আমরা আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের যে আভ্যন্তরীণ চাহিদা সেটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে আমরা রফতানি নিয়ে ভাবতে পারবো।
ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান এ আয়োজনের মাধ্যমে রফতানি বাণিজ্যের বর্তমান সঙ্কটগুলো চিহ্নিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বাংলা ট্রিবিউন নিয়মিত সমসাময়িক বিষয়ে বৈঠকির আয়োজন করে থাকে। সঞ্চালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আলোচনা শেষে বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে সম্মিলিত প্রয়াসেই পারে এগিয়ে নিতে।
ইশতিয়াক রেজার সঞ্চালনায় বাংলা ট্রিবিউন আয়োজিত ‘রফতানি বাণিজ্য ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক বৈঠকিতে অংশ নেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও মাফরুহা সুলতানা, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, এজিডব্লিউইবি এর সভাপতি মৌসুমী ইসলাম, ইএবি সভাপতি সালাম মুর্শেদী, বিডিজবস সিইও ফাহিম মাশরুর, ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না, সাংবাদিক শওকত হোসেন মাসুম ও ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।
/ইউআই/এফএএন/