কোচিং করতে এসে জঙ্গি হয়ে ওঠে সাইফুল

জঙ্গি সাইফুল রহমান ওরফে বাবলু‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ঢাকায় কোচিং করতে এসে পরিবারের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে সাইফুল রহমান। আমরা তাকে বাবলু নামেই ডাকতাম। দীর্ঘদিন তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল না। শেষে গাজিপুরে র‌্যাব-পুলিশের অভিযানের পর পত্রিকায় জঙ্গিদের প্রকাশিত ছবি দেখে তাকে আমরা চিনতে পারি।’ বাংলা ট্রিবিউনকে কথাগুলো বলছিলেন নিহত জঙ্গি সাইফুলের বাবা মতিউর রহমান ময়না শাহ।

জঙ্গি সাইফুলের বাবা বলেন, ‘সাইফুল এলাকার মনিরগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি পাস করে পীরপুর হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং সার্ক ইন্টারন্যাশনাল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য কোচিং করতে ঢাকায় এসে  দু’মাস ধরে নিখোঁজ ছিল। এরপর সে পরিবারের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাইফুলকে যারা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। কারণ জঙ্গিদের গডফাদাররা যদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, তাহলে সাইফুলের মতো অনেক যুবক বিভ্রান্ত হয়ে জঙ্গি হয়ে উঠবে।’

নিহত সাইফুলের বাবা বলেন, ‘ছেলে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছি। গরুর ব্যবসা করে তার লেখাপড়ার খরচ দিয়েছি। আমার আশা ছিল, সে ভবিষ্যতে বড় চাকরি করবে। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য সে জঙ্গি হয়ে গেলো! যারা আমার ছেলেকে নষ্ট পথে নিয়েছে, আমি জাতির কাছে তাদের বিচার চাই।’

জঙ্গি সাইফুলের বাবা মতিউর রহমান ময়না শাহ ও মা হুসনে আরা বেগমসাইফুলের মা হুসনে আরা বেগম বলেন, ‘নিজ হাতে ছেলেকে আমি ছোট থেকে বড় করেছি। যারা আমার ছেলেকে এই পথে নিয়েছে, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। যেন আর কোনও মায়ের বুক জঙ্গিদের মদদদাতারা খালি করতে না পারে।’

নিহত সাইফুলের শিক্ষক পীরপুর শুক্কুরুনেচ্ছা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাইফুলের ব্যবহার কখনও খারাপ মনে হয়নি। সে খুব মেধাবী ছিল। সে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে।’

সাইফুলের চাচা আবদাল মিয়া বলেন, ‘সাইফুলের বাবা খুব কষ্ট করে তাকে লেখাপড়ার খরচ দিয়েছেন। তাকে যারা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়েছে, তাদের শাস্তি হতেই হবে।’

মনিরজ্ঞাতি গ্রামের ফয়সল উদ্দিন বলেন, ‘সাইফুল লেখাপড়ার জন্য বেশির ভাগ সময় সিলেটে থাকতো। গ্রামে তার পরিচিতি ছিল কম।’ 

দক্ষিণ খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির অভিযোগ করে বলেন, ‘সাইফুল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। সে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজের বিষয়টি সাইফুলের পরিবার আমাকে জানিয়েছিল। এমনকি ছাতক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন সাইফুলের বাবা।’ 

উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর গাজীপুরের পাতারটেক এলাকায় পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয় ৭ জঙ্গি। তাদের মধ্যে তিন জনের পরিচয় পাওয়া যায়। যাদের একজন হলো সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের মনিরগাতি গ্রামের সাইফুল রহমান ওরফে বাবলু। সে এলাকার গরুর ব্যবসায়ী মতিউর রহমান ময়না শাহ ও হুসনে আরা দম্পতির একমাত্র ছেলে ছিল। এছাড়া তার আরও ছোট দুই বোন রয়েছে।

/এসএনএইচ/এমএনএইচ/