ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলন

সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থী সহিংসতা দমনে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসন্ত্রাসবাদবাদ ও চরমপন্থী সহিংসতা দমনে ব্রিকস ও বিমসটেক দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিমস্টেকের এখন উচিত আগামী পাঁচ বছর সব কিছু ভুলে বাণিজ্য, জ্বালানি, কানেক্টিভিটি আর সন্ত্রাসবাদ-দমন এই চারটে বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা।

যে কোনও রূপ ও আকারেই হোক না কেন সন্ত্রাসবাদ নিন্দনীয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে – এমন কী দেশের ভেতরেই গজিয়ে ওঠা জঙ্গদের পুরোপুরি ছিন্নভিন্ন করে দিতেও সক্ষম হয়েছে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সমর্থক – ‌উভয়ের বিরুদ্ধেই আমাদের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সন্ত্রাসবাদীদের যারা মদত দেয়, পরামর্শ দেয়, অর্থ বা প্রশিক্ষণ জোগায় কিংবা অস্ত্র হাতে তুলে দেয় তাদের সবার আগে খুঁজে বের করতে হবে।’

দেশে তরুণদের মধ্যে জঙ্গীবাদের প্রসার রুখতে  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতা অভিযান চালানোর কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা ব্রিকস ও বিমসটেকের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য সুনির্দিষ্ট ৩টি পন্থা অনুসরণের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘সহযোগিতার জন্য পারস্পরিক সম্ভাব্যতা ও যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণের এটাই সময়।’

প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের মধ্যে রয়েছে, (১) মানসম্পন্ন ও টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া (২) প্রযুক্তির জন্য বৃহত্তর সহযোগিতা কর্মসূচি চালু এবং (৩) স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সংলাপের প্রক্রিয়া শুরু করা।

টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নে আমাদের সব প্রচেষ্টা শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভরশীল।

ব্রিকস ও বিমসটেকের নেতৃবৃন্দকে একই টেবিলে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই দুই গ্রুপের মধ্যে সহযোগিতার লক্ষ্যে পারস্পরিক সম্ভাব্যতা ও যৌথ কর্মপন্থা আমরা কীভাবে নির্ধারণ করবো তার স্বাক্ষর রাখার এটা এক সুযোগ ও যথার্থ সময়।’

১৯৯৭ সালে বিমসটেক গঠনের উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শেখ হাসিনা বলেন, ‘সম্ভাবনাময় বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নে এই ফোরাম গঠন করা হয়। এই অঞ্চল কৌশলগতভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগসস্থলে অবস্থিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ অঞ্চলে রয়েছে কর্মক্ষম যুবশক্তি যা আগামী কয়েক দশক পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’

সম্মেলনে ব্রিকস ও বিমসটেক দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা বক্তব্য দেন। শনিবার শুরু হওয়া এ সম্মেলন আজ (রবিবার) শেষ হচ্ছে। শেখ হাসিনার আগে সম্মেলনে বক্তব্য দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মাইকেল থেমের, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ড। শেখ হাসিনার পরে ভাষণ দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিন টোবগে, শ্রীলঙ্কার ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আং সান সুচি।

ব্রিকস-বিমসটেক দেশের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

এর আগে বিমসটেক সম্মেলন শুরুর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে করমর্দন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ব্রিকস-বিমসটেক লিডারস আউটরিচ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য রবিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে ভারতের গোয়ায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সফর সঙ্গীদের নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট সকাল ১০টা ১৫মিনিটে (ভারতীয় সময়) গোয়া নেভাল বেইজ এয়ারপোর্টে পৌঁছায়। সেখানে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অ্যালিনা সালদানহা, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। নরেন্দ্র মোদি বাংলায় টুইট করে তাকে স্বাগত জানান।

শনিবার থেকে শুরু হওয়া ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম রাজ্য গোয়ায় দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের থিম হচ্ছে- ‘ব্রিকস-বিমসটেক : একটি অংশীদারিত্বের সুযোগ’।

শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আজ রাতে প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে দেশে ফিরবেন।

/এএ/