রাজধানীজুড়ে ভোগান্তি: কোথাও গাড়ি নেই কোথাও যানজট

সকালে প্রায় ফাঁকা রাস্তা

মিরপুর শ্যাওড়াপাড়া থেকে মতিঝিল যাবেন আমিনুল ইসলাম। যানজট হবে ভেবে সকাল সাড়ে আটটার দিকে বের হন বাসা থেকে। কিন্তু, বেরিয়ে পড়েন আরেক বিপদে। রাস্তা উল্টো ফাঁকা, কোনও বাস নেই। যে দু একটা সিএনজিচালিত অটোরিক্সা আছে তার ভাড়া আকাশছোঁয়া। কোনওমতে রিকশায় চেপে ফার্মগেট পৌঁছে ফুটওভার ব্রিজ পার হন। কিন্তু, সেখানেও কোনও বাস না পেয়ে বাকি পথটাও ভেঙে ভেঙে রিকশায় যেতে বাধ্য হন তিনি।

এই ছিল রবিবার আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন উপলক্ষে ট্রাফিক পুলিশ নিয়ন্ত্রিত রাজধানীর সকালের চেহারা। এদিন পূর্ব ঘোষণা দিয়েই সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ডাইভারশন করে মহানগর ট্রাফিক পুলিশ। ফলে মারাত্মক যানজটের আশঙ্কায় ঘর থেকে বের হননি অনেকে। ফলে রাস্তায় প্রাইভেট কারের সংখ্যা ছিল বেশ কম। কিন্তু নিত্যদিন যাদের রুটিরুজির সংগ্রামে নামতে হয় তাদের ঘর থেকে ঠিকই বের হতে হয়েছে। তবে যাত্রীবাহী বাসও নির্ধারিত গন্তব্যে না চলায় সকালে সবাইকে আমিনুল ইসলামের মতো দুর্ভোগে পড়তে হয়।

এদিন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় এ প্রতিবেদকের কথা হয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। এদের একজন ওই এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী রফিকুল হক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার দেখা এরকম ছবি এর আগে নাই। হরতালের চেয়েও কঠিন অবস্থা। ফুটপাতে দোকানও নাই। সবাই মনে হয় সম্মেলনের ছুটিতে গেছে।’

সকালবেলা রাজধানীর ফার্মগেটে যাত্রীবাহী বাসের সংকট

কেবল ফার্মগেট না, রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক মিরপুর রোড, রোকেয়া সরণী, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ ঘুরে দেখা গেছে রাস্তা ফাঁকা। সকালে শ্যামলী থেকে রওনা দিয়ে আগারগাঁও-তেজগাঁও-ফার্মগেট-কারওয়ানবাজার-বাংলামোটর হয়ে মিন্টোরোড-কাকরাইল মোড়ে মোড়ে মানুষ গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। সবখানেই ফুটপাত ধরে নারী পুরুষ নির্বিশেষে কর্মজীবী মানুষের হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চিত্র।

মোহাম্মদপুরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহনাজ পারভীন। তিনি বনানী যাওয়ার জন্য বের হয়ে একঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনও ব্যবস্থা করতে পারেননি। বেশিভাড়া দিতে চাইলেও সিএনজিচালিত অটোরিক্সাচালক যেতে রাজি হননি।

ফার্মগেটে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল সেলিম ভোর পাঁচটা থেকে ফার্মগেটে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সকাল ১১ টা ৪৫ মিনিটে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সকালে একদম কম গাড়ি ছিল। এখন একটু বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন এসময় ৫জন এখানে ডিউটি করলেও আজকে একজনেই সব সামলে নিচ্ছেন।

এদিকে সকালের দিকে সম্মেলন সংলগ্ন এলাকায় ছিল ভিন্ন ভোগান্তির চিত্র। সকাল নয়টার দিকে গুলিস্তান মোড়ের যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য যানবাহনকে ট্রাফিক পুলিশ দোয়েল চত্বর হয়ে নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশ অনুযায়ী দোয়েল চত্বরে গিয়ে সব গাড়ি আটকে যায়। এছাড়া শাহবাগ, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, হাতির পুল এসব এলাকায় সকালবেলা পুরো রাস্তাজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মিছিল করে সম্মেলনস্থলে যাওয়ার কারণেও ওই সড়কগুলোতে চলাচলেও ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

সকালে ফাঁকা ফার্মগেট এলাকা

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ চিত্র খানিকটা পাল্টে গেছে। এখন সব রুটেই যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে এখনও যান চলাচল বেশ কম থাকায় মিরপুর সড়ক, শ্যাওড়া পাড়া, রোকেয়া সরণি, মানিক মিয়া এভিনিউ, বনানী, মহাখালী এলাকায় ভিড় তেমন নেই। তবে শাহবাগ মৎস্যভবনসহ সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের সড়ক জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে যান চলাচলের গতি খুব ধীর। সহজেই কোনও গাড়ি নড়ছে না। সেখানে আশপাশের সব রোডেই যান চলাচল বন্ধ।  বিশৃঙ্খলা এড়াতে গণপরিবহনের জন্য বিকল্প পথ নির্দিষ্ট করেও কোনও সুব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।

রাস্তায় যানবাহনের সংকট

তাই শনিবার সকাল-দুপুরের এই চিত্র দেখে রাস্তায় হেঁটে চলা মানুষের মনে প্রশ্ন, শনিবার ছুটির দিন সকালে এই দুর্ভোগ হলে কাল রবিবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে।

/এআরআর/ইউআই/টিএন/

 

আরও পড়ুন:

আ. লীগের কোনও কর্মী ব্যথা পেলে আমার হৃদয়ে লাগে: আশরাফ

সম্মেলন উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা