গত কোরবানীর ঈদের আগের দিন রাতে ট্রেনের ছাদে করে নোয়াখালির চৌমুহনি গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন মামুন। তিনি পুরান ঢাকার ইসলামপুরের ব্যাগ তৈরির কারখানায় কর্মরত। ট্রেনে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তিনি, ছিনতাইকারীরা তাকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। গুরুতর আহত মামুনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে আসার পর মামুনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিটিস্ক্যান করতে বলেন। কিন্তু সঙ্গে এটাও বলা হয় ঢামেকের সিটিস্ক্যান মেশিনটি বন্ধ আছে। তাকে পপুলার হাসপাতালে গিয়ে সিটিস্ক্যান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু দরিদ্র মামুনের মা ফাতেমা বেগমের পক্ষে সম্ভব হয়নি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে সিটিস্ক্যান করিয়ে আনার। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আবার কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দেন।
দেশের সবচেয়ে বড় এই সরকারি হাসপাতালে (দুই হাজার ৬০০ শয্যার) দিনে গড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন। বহির্বিভাগে সাড়ে তিন হাজারের বেশি এবং জরুরি বিভাগ থেকে অন্তত ১ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। আর এসব রোগীদের মধ্যে যারা জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের সিটি সিটি (কম্পিউটেড টমোগ্রাফি) স্ক্যান এবং এমআরআইয়ের (ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং) মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করার দরকার হয়। কিন্তু সিটিস্ক্যান ও এমআরআই মেশিন দুটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। পুরাতন একটি সিটিস্ক্যান মেশিন নষ্ট হয়ে আছে প্রায় ১ বছর ধরে, আর নতুন মেশিনটিও নষ্ট হয়েছে প্রায় অনেকদিন। চিকিৎসা ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মেশিন দুটি নষ্ট থাকায় এই হাসপাতালে আসা নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র রোগীদের দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শেষ নেই, একই সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে চিকিৎসার খরচও।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৪ ঘন্টায় এখানে প্রায় ১০০ রোগীর সিটিস্ক্যান এবং ২০ থেকে ২৫ জন রোগীর এমআরআই করা হতো। রেডিওলজি বিভাগের একমাত্র সিটিস্ক্যান মেশিনটি গত ২৯ জুলাই নষ্ট হয়ে যায়, আর অন্যটি নষ্ট ছিল প্রায় ১ বছর ধরে। রেডিওলজি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এখানে বুক ও মাথা সিটিস্ক্যান করতে খরচ দুই হাজার টাকা, হোল অ্যাবডমেন করতে খরচ চার হাজার টাকা; যেখানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এ খরচ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। একই সঙ্গে রয়েছে যাতায়াত খরচ। ‘এতো টাকা আমাদের মতো নিম্নবিত্তদের পক্ষে যোগানো সম্ভব নয়’ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন ঢামেকে সিটিস্ক্যান করতে ব্যর্থ হওয়া মামুনের মা ফাতেমা বেগম।
অপরদিকে, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে নষ্ট হওয়া একমাত্র এমআরআই মেশিনটি নষ্ট হওয়ায় প্রতিদিন ফেরত যাচ্ছেন প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন রোগী। ঢামেকে যেখানে এমআরআই করতে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা, সেখানে বাইরে হাসপাতালভেদে এর খরচ ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিবের নেতৃত্বাধীন এক কমিটি ইতোমধ্যেই পুরাতন সিটিস্ক্যান মেশিনটিকে মেরামত অযোগ্য এবং অচল বলে ঘোষণা করেছেন জানিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক খাজা আব্দুল গফুর বলেন, ‘পুরাতন মেশিনটিকে মেরামত অযোগ্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর নতুন মেশিনটির মেরামতের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সেটি মেরামত করা হবে। মেরামতে কতদিন লাগতে পারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটাতো বলা মুশকিল, তবে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি এবং সেটি যত দ্রুত সম্ভব করা হবে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মিজানুর রহমান সিটিস্ক্যান নষ্ট থাকার কথা স্বীকার করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটিস্ক্যান মেশিনটি নষ্ট, মেশিনটির পার্টস বিদেশ থেকে আনতে হবে, আমরা অর্ডার দিয়েছি। তবে সেটি আসতে সময় লাগবে। নতুন আরেকটি মেশিনের জন্যও জায়গা সেটআপ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে টাকা দেওয়াও হয়ে গিয়েছে, আমরা আশা করছি শিগগিরই নতুন মেশিনটি চলে আসবে।’
আরও পড়ুন-
কবে পূরণ হবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির শূন্য তিন পদ?
/এফএইচএম/এফএস/