সাধারণ স্কুল-কলেজে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সর্বক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ স্কুল নয়। সাধারণ স্কুলেও প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।’ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘২৫ তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ১৮ তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস-২০১৬’ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করতে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের ভেতরে অনেক মেধা লুকিয়ে থাকে। সেই সুপ্ত মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে।’ এসময় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সায়মা হোসেন পুতুলের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধীতার কারণে কোনও শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা যাবে না। শিক্ষাখাতে প্রতিবন্ধীদের জন্য সব রকম সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির ব্যবস্থা নিয়েছি। শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছি, নীতিমালায় প্রতিবন্ধীদের জন্য সবরকম সুযোগ রাখা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হোক।’
এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করতে পেরেছিলো জনগণের সেবা করাটাই হচ্ছে এ সরকারের দায়িত্ব। সেখানে যারা প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক তাদের বিষয়টি অবশ্যই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত। সেই সময় থেকে প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতার জন্য কাজ করছি।’
গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা হোসেনের প্রচেষ্টায় দেশ ও বিদেশে অটিজমের গুরুত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য কর্তৃক ‘এক্সিলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওয়ার্ড, প্রদান করেছে, বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩, ৬৪ জেলায় সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ৬৪০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে আবাসিক শিক্ষা, ১২টি দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্কুলে প্রায় একহাজার শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার সুযোগ সুবিধাসহ বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়াও সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে ৬২টি বিশেষ স্কুল, যেখানে প্রায় ১০ হাজার অটিকম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রী, ৭০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ৫০ কোটি টাকার উপবৃত্তি, বিনামূল্যে ব্রেইল বই, তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ৩২টি মোবাইল থেরাপি ভ্যান চালু, বিসিএসসহ প্রথম শ্রেণির চাকুরিতে ১ শতাংশ, ৩য় ও চুতর্থ শ্রেণির সরকারি চাকুরিতে ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণসহ নানা পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গনে ‘প্রতিবন্ধিতা উন্নয়ন মেলা ২০১৬’ উদ্বোধন করেন। এ সময় অপর প্রান্তে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি রজব আলী খান নজিব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জিল্লার রহমান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
- আইভী-শামীমের কর্মকাণ্ডের খোঁজ রাখছেন শেখ হাসিনা
- ‘আইএসের কাছ থেকে তামিমের অনুমতি নেওয়ার কোনও তথ্য নেই’
/পিএইচসি/এমও/