বিমান বাহিনীর সদস্যদের আরও দক্ষ হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

 

 

কুর্মিটোলা সেনানিবাসে বিমান বাহিনীর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিকে ‘ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাদেশের আকাশসীমাকে নিরাপদ রাখার জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমান বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের নিজেদের দক্ষ ও আদর্শ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলে দেশের আকাশ সর্বদা নিরাপদ ও শত্রুমুক্ত রাখতে হবে।’  রবিবার সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলা সেনানিবাসে বিমান বাহিনীর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিকে ‘ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল যাত্রা শুরু করা বিমান বাহিনীর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিকে মর্যাদাপূর্ণ ‘ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড’ প্রদান করেন।

জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে কেনা বিমান বাহিনীর সদস্যদের এয়ার ক্রাফট, রাডারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ ব্যবহারে দক্ষ এবং যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আপনাদের নিজস্ব সক্ষমতা সম্পর্কে দেশে যেমন, তেমনি দেশের বাইরেও সতর্ক থাকতে হবে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী গ্রুপ ক্যাপ্টেন রেজা ইমদাদ খানের পরিচালনায় একটি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। কুচকাওয়াজটি প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানায়। এছাড়া বিমানবাহিনীর মিগ-২৯, এফ-৭বিজি এবং এফ-৭বিজি১ ফাইটার বিমানের মনোরম ফ্লাইপাস্ট প্রত্যক্ষ করেন এবং বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন  প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বঙ্গবন্ধু ঘাঁটির প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে তাকে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার ও এয়ার কমোডর এম মফিদুর রহমান স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর সাহসিকতাপূর্ণ অবদান বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ বিমন বাহিনীর সদস্যরা তাদের দক্ষতা, দেশপ্রেম, নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ভাবিষ্যতে দেশ ও জাতির জন্য আরও সাফল্য বয়ে আনবেন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের গড়ে তুলবেন এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সর্বতভাবে সক্ষম হবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের একটি প্রধান অপারেশনাল বিমান ঘাঁটি। যা হোম অব ফাইটারস নামে পরিচিত। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সর্ববৃহৎ যুদ্ধ বিমান ঘাঁটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ঘাঁটিটি মিত্র বাহিনীর বিমান পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা এ ঘাঁটির পুনর্গঠন ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন।’

জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আকাশ প্রতিরক্ষায় এ ঘাঁটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিকালীন সময়েও এ ঘাঁটি থেকে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় এই ঘাঁটির পারদর্শিতা প্রশংসিত হয়েছে।’  তিনি বলেন, ‘বিমান বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের জন্য এ ঘাঁটিতে ক্যাডেটস ট্রেনিং ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা পরবর্তী সময়ে বিমান বাহিনী একাডেমি হিসেবে যশোরে স্থানান্তরিত হয়।’

বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার বিমান বাহিনীকে একটি যুগোপযোগী ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চতুর্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানসহ পরিবহন বিমান এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা র‌্যাডার সংযোজন করে। সম্প্রতি আমাদের সরকার বিমান বাহিনীতে যুক্ত করেছে এফ-৭ বিজি যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় ইতোমধ্যেই বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে নতুন নতুন ইউনিট, বৃদ্ধি পেয়েছে জনবল। বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নততর এবং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ সুনিশ্চিত করার জন্য সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার। এর পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নও চলমান রয়েছে।’

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিদেশি কূটনীতিক, নৌবাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ উচ্চপর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস

 /এমএনএইচ/