জিএফএমডি সম্মেলনে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান

জিএফএমডি সম্মেলনের প্ল্যানারি সেশনে বক্তারাঅভিবাসীদের সুরক্ষার জন্য আইনি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাদের স্বার্থ রক্ষায় গ্লোবাল কমপ্যাক্ট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নবম গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) সম্মেলনে এভাবেই অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিন শনিবার ‘প্ল্যানারি সেশনে’ বক্তারা এ তাগিদ দেন।

ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের নেতৃত্বে দেশটির নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল জিএফএমডি সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। প্ল্যানারি সেশনে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর বলেন, ‘অভিবাসন ও উদ্বাস্তু এক জিনিস নয়। প্রায় ২৫ কোটি গৃহহারার মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ উদ্বাস্তু। যুদ্ধের মতো মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের অবসান ঘটাতে হবে। গৃহহারা হতে কাউকে যেন বাধ্য না করা হয়। তাহলেই অবৈধ অভিবাসন বন্ধ হয়ে যাবে।’ শ্রম অধিকার রক্ষার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘অভিবাসীদের কেন্দ্রবিন্দু ধরে সবকিছুর ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থনৈতিক কারণে অনেকে অভিবাসন করে এবং তাদের সুরক্ষার জন্য আইনি পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

এ সময় গ্লোবাল কমপ্যাক্ট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদমন্ত্রী সাকার ঘোবাস। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা হবে। আমরা অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করার পক্ষে। এ অঞ্চলে শ্রম অধিকার রক্ষায় যে ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করার জন্য আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি।’ অভিবাসীদের কর্মদক্ষতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। কেন মানুষ অভিবাসন করে, তার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনের জন্য নয় বরং অভিবাসনকে সুযোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘বর্তমানে অভিবাসন একটি নেতিবাচক কাভারেজ পাচ্ছে। অনেক দেশ অভিবাসীদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজনীতিবিদদের মুখ্য ভূমিকা নিতে হবে। সংকীর্ণ বর্ণবাদ মন-মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’ এ সময় তিনি অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করার ওপরও জোর দেন।


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিটেন্ট সেক্রেটারি অ্যান রিচার্ড বলেন, ‘এখনও অনেক মানুষ বিপজ্জনক পথে অভিবাসন করছে। অভিবাসন প্রয়োজনের কারণে নয় বরং সুযোগের কারণে হওয়া উচিত।’ গত সেপ্টেম্বরে নিউইর্য়কের জাতিসংঘে অভিবাসন সংক্রান্ত বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্টের বিষয়ে সবাই কাজ করছে। কয়েক বছর আগে যদি কেউ আমাকে বলতো যে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা অভিবাসন নিয়ে সারাদিন বৈঠক করবেন, আমি তা বিশ্বাস করতাম না।’ তিনিও শ্রম অধিকার ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের ওপর জোর দেন।
প্ল্যানারি সেশনে চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং বলেন, ‘এখন অভিবাসন অনেক জটিল আকার ধারণ করেছে। প্রতিটি দেশকে উন্মুক্ত মন-মানসিকাতা নিয়ে অভিবাসীদের গ্রহণ করতে হবে।’
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মহাপরিচালক গাই রাইডার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক লেসি সুইংসহ জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিশ্বের ১২৫টি দেশ, ৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং নাগরিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে এবার ঢাকায় এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরাসহ আট শতাধিক বিদেশি অতিথি সম্মেলনে নিবন্ধন করেছেন। সম্মেলন চলবে সোমবার পর্যন্ত।

আরও পড়ুন-
‘অভিবাসন ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল বৈশ্বিক ব্যবস্থা দেখতে চায় বাংলাদেশ’

 

/এসএসজেড/এমও/টিআর/