নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনও বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ১৪ নেতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার বাধ্যবাধকতা করে দেওয়া হয়েছে। মহানগরের অন্তর্গত ২৭টি ওয়ার্ডের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে প্রতিদিন নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়াদি ১৪ কেন্দ্রীয় নেতাকে অবহিত করতে হবে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ১৪ নেতার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বর ওয়ার্ডের প্রত্যেক নেতার কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, শামীম বা আইভী নয়, প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করতে হবে এ ১৪ জনের সঙ্গে।
একজন কেন্দ্রীয় নেতা নারায়ণগঞ্জের দুটি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবেন। কেন্দ্রীয় নেতারা নাসিক নির্বাচনের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা অপর দুই কেন্দ্রীয় নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ও সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মহিবুল হাসান নওফেলকে প্রতিদিন অবহিত করবেন। এই দুই নেতা আবার নাসিক নির্বাচনের খবরাখবর প্রতিদিন অবহিত করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ অভিনব কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই কৌশল গ্রহণ করার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে দুই গ্রুপকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। যাতে শামীম ও আইভীর লোকজন জবাবদিহিতার মধ্যে থাকে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী সূত্র ও সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা নেতারা এ তথ্য স্বীকার করেছেন। এই সূত্রগুলো জানায়, এই প্রথম কেন্দ্রীয় নেতাদের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বিরোধ মীমাংসার জন্যে এ কৌশল গ্রহণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপুকে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের অন্তর্গত ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আনোয়ার হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৫ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের। শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৬ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের। বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকে দেওয়া হয়েছে ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব। শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপাকে দেওয়া হয়েছে ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড। স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের। সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের। সদস্য মারুফা আক্তার পপির দায়িত্ব ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের। কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলিকে দেওয়া হয়েছে ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব। সদস্য আমিরুল ইসলাম মিলনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের। সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলকে দেওয়া হয়েছে ২৩ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব । এছাড়া, সাবেক স্বাস্থ্য সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূঁইয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ১৪ জন নেতাকে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনও বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন। ওয়ার্ডের নেতাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। সবাইকে নারায়ণগঞ্জের দলীয় কার্যালয়ে প্রতিদিন এসে বসার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।’ এর সত্যতা স্বীকার করেন সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান নওফেলও।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো জানায়, শামীম ওসমান ও আইভীর পরস্পর বিরোধিতা যেন ভোটের মাঠে কোনও প্রভাব ফেলতে না পারে সেজন্য নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে বেশি সংখ্যক কেন্দ্রীয় নেতাকে যুক্ত করার এই কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শামীম ও আইভীকে গণভবনে ডেকে মিলিয়ে দিলেও আভ্যন্তরীণ বিরোধ মীমাংসায় কিছুটা ঘাটতি অনুভব করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ফলে নাসিক নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সভাপতিমন্ডলীর দুই সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভেতরে একটি অংশ আছে যারা এখনও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হননি। ওয়ার্ডের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়ার ফলে নারায়ণগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মী যারা এখনও নিষ্ক্রিয় রয়েছেন তারাও সক্রিয় হতে বাধ্য হবেন। তাই কৌশলটি গ্রহণ করা হয়েছে। ওই দুই নেতা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে কোনও ধরনের অনৈক্য তিনি মেনে নেবেন না। দলের মধ্যে অনৈক্য দূর করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
/এএআর/ আপ- এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
শাড়ি পেয়ে শামীম ওসমানকে ধন্যবাদ আইভীর
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: দর কষাকষি তিস্তা নিয়ে
বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে আগ্রহী কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত