যানজট ও জনজটে নাকাল নগরবাসী

ছাত্রলীগের র‌্যালির কারণে যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানীর মহাসড়কগুলো

রাজধানীবাসীর সঙ্গে যানজটের সখ্যতা পুরনো। ঢাকার রাস্তায় নামলেই যানজটে কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে এটা ধরে নিয়েই পথে বের হতে হয় সবাইকে। কিন্তু, বড় কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বা বিদেশি অতিথির আগমনে এই পরিস্থিতি মাঝে মাঝেই অসহনীয় পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। শাসক দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে ঘিরে এমন দুর্বিষহ যানজটে আজ নাকাল হচ্ছে রাজধানীবাসী।

আজ ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সবচেয়ে বড় কর্মসূচিটি ছিল আনন্দ র‌্যালি। এ র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে সকাল থেকেই রাজধানীর প্রতিটি পাড়া মহল্লা ও এলাকা থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসতে থাকে। তাদের পদযাত্রা, রাস্তার একপাশ দিয়ে আসা ছোট ছোট মিছিল, গাড়ি মিছিল ইত্যাদির কারণে সকাল থেকেই বিভিন্ন রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে এ পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করে দুপুরে ছাত্রলীগের আনন্দ র‌্যালি বের হওয়ার পরে।

ছাত্রলীগের র‌্যালির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট-২

বেলা পৌনে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ শেষ করে র‌্যালি শুরু করে ছাত্রলীগ। সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী এই র‌্যালিতে অংশ নেওয়ায় র‌্যালিটি দেখার মতো বিশাল আকার ধারণ করে। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর এলাকা থেকে শাহবাগ চার রাস্তার সংযোগস্থলে আসতেই থমকে দাঁড়ায় সড়কের সব ধরনের যানবাহন। র‌্যালিটি এতই দীর্ঘ ছিল যে এর অগ্রভাগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছলেও শেষ ভাগ তখনও ছিল অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ এলাকায়।  আর এ কারণে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন, জিপিও হয়ে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউজুড়ে যে যানজট ও জনজটের সৃষ্টি হয় তা ছড়িয়ে যায় শহরজুড়ে।

ছাত্রলীগের র‌্যালির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট-১

ফলে দুপুর ১২টার দিকে একেবারে থমকে দাঁড়িয়ে যায় রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো। এ যানজট এতটাই তীব্র আকার ধারণ করে যে তা গুলিস্তান থেকে রাজধানীর উত্তরা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।  প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, বিমানবন্দর এলাকা থেকে বনানী, মহাখালী, ফার্মগেট পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে গণপরিবহন ও প্রাইভেট কারগুলোকে দীর্ঘ সময় ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ফলে কর্মজীবী ও জরুরি কাজে বের হওয়া যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো।

নিউ ভিশন বাস মতিঝিল থেকে ছেড়ে আসে সকাল ১১টায়। দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত বাসটি দাঁড়িয়ে থাকে দৈনিক বাংলার মোড়ে। যাত্রীভর্তি বাস ছাড়লেও জ্যামে পড়ে থাকতে থাকতে বাসটিতে ড্রাইভার ও তার সহযোগীরা ছাড়া বাসটিতে আর কেউ ছিল না। যাত্রীশূন্য বাসটির ড্রাইভার শামসুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আজকে দিন শেষ হবে এখানেই। তিনি বলেন, এই জট সহজে সারবে না। মতিঝিল পাড়ার অফিস শেষ হলে এই জট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।

ছাত্রলীগের র‌্যালির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট-৩

শাহবাগের বারডেম হাসপাতালের সামনে গুলিস্তানমুখী যাত্রীশূন্য আরেকটি বাস একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল প্রায় আড়াই ঘণ্টা। বাসটির ড্রাইভার মো. আকবর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আজকে বেতন ছাড়াই বাসায় ফিরতে হবে। মালিকের জমাই দিতে পারব না। তার আশঙ্কা সন্ধ্যা নাগাদ এর ভোগান্তি পোহাতে হবে যাত্রীদের এবং আমাদের।

ইউনূস আলী নামে এক পথচারী উত্তরায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে কমলাপুর থেকে বাসে ওঠেন সাড়ে ১০টায়। কিন্তু, প্রেসক্লাব পর্যন্ত আসার পর তীব্র যানজটের কারণে একই জায়গায় এক ঘণ্টা ঠায় বসে থেকে বাস থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে বাংলা মোটর পৌঁছান।  সেখানেই বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় তার। তিনি বলেন, জরুরি কাজে আমাকে উত্তরায় যেতে হচ্ছে। রাস্তায় নেমে ভীষণ বিরক্ত লাগছে। এসব অনুষ্ঠান কেন বন্ধের দিন করা যায় না অথবা নির্দিষ্ট কোন জায়গায় হয় না সে প্রশ্ন করেন তিনি।

ব্যাংকে চাকরি করেন রুবায়েত। তার সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের কথা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়কে। প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়িতে বসে আছেন বলে জানান তিনি।  রুবায়েত বলেন, গাড়ি এত ধীরে চলছে যে কখন গিয়ে অফিসে পৌঁছবো বুঝতে পারছি না।’

ছাত্রলীগের র‌্যালির কারণে এমন চিত্র ছিল রাজধানীর প্রায় সব মহাসড়কের

এদিকে দুঃসহ যানজটের কবলে পড়ে নির্ধারিত সময়ের অনেক পড়ে অফিসে এসে পৌঁছান বাংলা ট্রিবিউনের অনেক কর্মীও। তাদের অনেকেই জানান, অন্য পথচারীদের মতোই বাধ্য হয়ে দীর্ঘপথ হেঁটে অফিসে আসতে হয়েছে।

বিকাল সাড়ে তিনটায় মৎস্য ভবন ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক সার্জেন্ট জহুরুল বলেন, এ সময় পর্যন্ত চারদিকের রাস্তা ব্লক হয়ে আছে। কোথাও যাওয়ার উপায় নাই। দুপুর থেকে এ পরিস্থিতি চলছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের র‌্যালির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

দুর্বিষহ যানজটে নাকাল হয়ে পায়ে হাঁটতে বাধ্য হয় সাধারণ মানুষ

যানজটের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর (রমনা) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আশরাফুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে  বলেন, সকাল থেকেই যানজট শুরু হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে সেটা প্রকট আকার ধারণ করে। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা থেকে শুরু হওয়া ছাত্রলীগের র‌্যালির কারণেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর প্রায় সব সড়তের ওপর। ফলে বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

/টিএন/

আরও পড়ুন: ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় থাকতে হবে: ওবায়দুল কাদের