আজ ঢাকা আসছেন মিয়ানমারের বিশেষ দূত

 

বাংলাদেশ-মিয়ানমারমিয়ানমারের বিশেষ দূত ও দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউ কিও তিন আজ মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) ঢাকায় আসছেন। গত বছরের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে সে দেশের পুলিশ চৌকিতে আক্রমণে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। এর তিনমাস পর বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিয়ানমার। আর এই লক্ষ্যেই ঢাকায় বিশেষ দূত হিসেবে দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ইউ কিও তিনকে পাঠাচ্ছে সে দেশের সরকার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমারের বিশেষ প্রতিনিধি বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গেথে বৈঠক করবেন।’  তিনি বলেন, ‘ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রধান বিষয় রোহিঙ্গা সমস্যা এবং এর দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার কারণে গত কয়েকমাসে ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়েছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দুই দফা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছি। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধৃত্বপূর্ণ আচরণ প্রত্যাশা করি।’

এদিকে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে মিয়ানমারকে জানিয়েছে, ঢাকা রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান চায়। বাংলাদেশে অবৈধভাবে থাকা মিয়ানমারের সব নাগরিককে ফেরত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মিয়ানমারের বিশেষ দূত বাংলাদেশে কী বিষয়ে আলোচনা করতে চান, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণলায়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তারা জানিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে চায়।’

এদিকে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষনান সোমবার সংসদে মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ সবাইকে একযোগে রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান করার জন্য উৎসাহিত করেছেন।

সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য স্ট্রেইটস টাইমস-এর রিপোর্টে বলেছে সিঙ্গাপুরের দু’ জন সংসদ সদস্য মিয়ানমারের মিলিটারি সদস্যদের হামলার কারণে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়ে সিঙ্গাপুরের অবস্থান কী, সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান। এর উত্তরে বালাকৃষনান এ বিষয়ে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হলে ক্ষতিগ্রস্তরা পুনরায় তাদের জীবন শুরু করতে পারবেন।

বালাকৃষনান বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের অবস্থান হচ্ছে প্রতিটি সরকার জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে সব নাগরিকের সুরক্ষা দেবে। একইসঙ্গে প্রতিটি দেশের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রতিটি দেশেই ধর্ম, জাতি ও ভাষা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। রাখাইন প্রদেশে আন্তঃসম্প্রদায় সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল এবং এর দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি স্বল্পমেয়াদে সমাধান হবে না। সব পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করার জন্য সময় ও ধৈর্যের প্রয়োজন আছে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের পুলিশ চৌকিতে আক্রমণের পরে রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ চালায়  মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। ওই ঘটনায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে এবং ৫০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।

বংশ পরম্পরায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে বসবাস করলেও দেশটির সরকার তাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করে না। রোহিঙ্গারাও মিয়ানমারে কোনও ধরনের নাগরিক সুবিধা ভোগ করে না।

 আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ

এসএসজেড/এমএনএইচ/