৬৫ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার মিয়ানমারের প্রস্তাবে রাজি নয় ঢাকা

বাংলাদেশ-মিয়ানমারমিয়ানমার চায় দেশটি থেকে গত বছরের অক্টোবরের ৯ তারিখের পরে যে ৬৫ হাজার বেশিও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে  এসেছে, তাদের ফেরত নিতে। কিন্তু ঢাকা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশে অবস্থানকারী ৪ লাখ রোহিঙ্গাকেই ফিরিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ একটি টেকসই প্রত্যাবাসন কর্মকৌশলও চায়। এরফলে  যারা ফেরত যাবে, তারা যেন আর ফিরে আসতে না পারে।   রোহিঙ্গারা রাখাইন প্রদেশে যেন সম্মানের জীবন যাপন করতে পারে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে আগে থেকে প্রায় তিন লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বসবাস করছে। ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধিত এবং গত তিনমাসে ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা নতুনভাবে বাংলাদেশে ঢুকেছে।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মিয়ানমার প্রাথমিকভাবে গত দুই মাসে রাখাইন রাজ্য থেকে  বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়াদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তাদের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার দাবি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরুর আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলাদেশ মিয়ানমারের নিবন্ধিত শরণার্থী, অনিবন্ধিত ও নতুন আগত মিয়ানমার নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে একইসঙ্গে উদ্যোগ নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে।’

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির বিশেষ দূত চাও তিন ঢাকা সফরের সময়ে বুধবার পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এরপর বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এবং সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রত্যাবাসনকে কার্যকর ও টেকসই করতে চায়। এজন্য রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা ও টেকসই জীবিকার সুযোগ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে ঢাকা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই প্রত্যাবাসনকারী যেন নিজ ভূমিতে নিরাপত্তা ও সম্মানসহ স্বাভাবিক জীবিকা অর্জনের সুযোগ পায় এবং এ জন্য রাখাইন মুসলিমদের প্রান্তিকীকরণ রোধ ও তাদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় প্রত্যাবাসনকারী সংখ্যালঘুরা পুনরায় ফিরে আসতে পারে বলে বাংলাদেশ মত প্রকাশ করে।’

এএইচ মাহমুদ আরী বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি সমন্বিত ও সামগ্রিক কর্মপন্থা নির্ধারণের প্রস্তাব করে বাংলাদেশ এবং দু’পক্ষই এ বিষয়ে অনতিবিলম্বে আলোচনা করতে সম্মত হয়।’ বাংলাদেশ গত অক্টোবরের ৯ তারিখের ঘটনার পর থেকে বিপুল সংখ্যক মিয়ানমার নাগরিকের বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে তিনি জানান।

ইতোমধ্যে প্রায় ৬৫ হাজার মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অনুপ্রবেশের ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে মিয়ানমারের বিশেষ দূতকে জানানো হয়েছে।’

বিপুল সংখ্যক মিয়ানমার নাগরিকের সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশ এবং আনুমানিক ৩ লাখ অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিকের দীর্ঘ অবৈধ অবস্থানের কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম এলাকা ও কক্সবাজার অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিশেষ দূতকে জানানো হয়।

বিশেষ দূতের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ রাখাইন রাজ্যে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। যেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিকরা পূর্ণ নিরাপত্তা ও জীবিকার নিশ্চয়তাসহ দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে।

সরকার রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমান জনগোষ্ঠীর গণহারে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও মূল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে অনুরোধ জানায়। যেন এ সমস্যা বারবার তৈরি না হয়।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আলোচনাকালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের নিবন্ধিত শরণার্থী, অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক এবং নবাগতদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি জানায়। এ লক্ষ্যে একটি কর্মকৌশল নির্ধারণের প্রস্তাব করে।

এদিকে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশেষ দূতকে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের শুধু একক সমস্যা নয়, এটি বাংলাদেশেরও সমস্যা কারণ। এর ফলে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সমন্বিত রূপরেখা চাই। যেন ফলে এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করে। এর মাধ্যমে দুই দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং এজন্য রোহিঙ্গা সমস্যারও  দ্রুত সমাধান জরুরি।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে একাধিকবার মিয়ানমারের বিশেষ দূতকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। না হয় এটি চলতে থাকবে।’ বিশেষ দূতকে বলা হয়েছে, যেকোনও ধরনের বিদ্রোহ বা এ ধরনের কার্যকলাপ বন্ধের জন্য মিয়ানমারকে সব ধরনের সহায়তা করবে বাংলাদেশ বলে তিনি জানান।

 আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জোরালো আহ্বান বাংলাদেশের

এসএসজেড/এমএনএইচ/