‘ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তনে খুশি গভর্নর, ভালোভাবে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী’

ইসলামী ব্যাংক

ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তনে গভর্নর ফজলে কবির খুশি হয়েছেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ভালোভাবে নিয়েছেন এমন মন্তব্য করেছেন ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীর অর্থের সুরক্ষা দেবে নতুন পর্ষদ। এই ব্যাংকের প্রতি আস্থাশীল হয়ে যারা এখানে আমানত রেখেছেন তা সুরক্ষিত থাকবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হামিদ মিঞার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব-উল-আলম।  সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংকের ৩১৮ শাখার ব্যবস্থাপকসহ শীর্ষ পর্যায়ের ৫ শতাধিক কর্মকর্তা অংশ নেন।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আরাস্তু খান বলেন, এখন থেকে ব্যাংকের কেউ কোনও দলের রাজনীতি করবেন না। অতীতের রাজনীতির কারণে কারও চাকরি যাবে না। তিনি বলেন, এ ব্যাংকের কর্মীদের বেতন অন্যদের চেয়ে কম, এ জন্য সবার বেতন বাড়ানো হবে। অন্য ধর্মের কেউ শরিয়া মেনে ব্যাংকিং করতে চাইলে তাদেরকেও এই ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে নিয়োগ, পদোন্নতি সবই হবে মেধার ভিত্তিতে।

আরাস্তু খান বলেন, একনিষ্ঠভাবে ব্যাংককর্মী হিসেবে কাজ করতে হবে। তবে কেউ মিছিল-মিটিং করবেন, গাড়িতে বোমা হামলা করবেন এটি মেনে নেওয়া হবে না।  সবাই তো ভোট দেন। যে-কেউ যে-কাউকে ভোট দিতে পারেন। ব্যাংকে সঠিকভাবে কাজ করলে কারও কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু মিছিল করা যাবে না। মিটিং করা যাবে না। গাড়ি বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত কেউ থাকতে পারবেন না।

ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খান

নতুন চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, রাজনীতি বলতে শুধু জামায়াত ইসলাম নয়, কোনও দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে না। এর ব্যাতয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  তিনি আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংকের মৌলিক দর্শন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে কোনও পরিবর্তন হবে না ।

তিনি বলেন, এ ব্যাংক তার সকল কার্যক্রম  শরীয়াহ নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হবে।  জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন করা হবে। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষে নারী অফিসার নিয়োগ বৃদ্ধি এবং অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনকাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হবে। সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যাংক পরিচালনার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখতে তিনি শাখা ম্যানেজারদের প্রতি নির্দেশনা দেন।

ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, ইসলামী ব্যাংক দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিচালনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই ব্যাংক আগামীতে জিডিপিতে ১ শতাংশ অবদান রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মতিন বলেন, ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিবর্তন নিয়ে অনেক গুঞ্জন রয়েছে। তাতে কান না দিয়ে বর্তমানের মতো সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। মেধা যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পদোন্নতি দেওয়া হবে। তার কোনো ব্যতয় ঘটলে তিনি পদত্যাগ করে চলে যাবেন। এছাড়া কে কোন রাজনীতি থেকে চাকরিতে এসেছেন সেটা এই পর্ষদের বিষয় না। সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতা এখানকার প্রধান মাপকাঠি।

অডিট কমিটির চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বলেন, যে কোনও প্রতিষ্ঠানের একটা পরিবর্তন আসলে একগুয়েমি ভাব কেটে যায়। এখানকার পরিবর্তনটা প্রয়োজনের আলোকেই হয়েছে।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল মাবুদ পিপিএম বলেন, ইসলামী ব্যাংক একটি কল্যাণমুখী ব্যাংক। দুই-একশ পরিবার বা নির্দিষ্ট কিছু লোককে সেবা দেওয়ার জন্য নয়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের সেবার জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আলোকে এই ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়।

ব্যবসায়িক উন্নয়ন সম্মেলনে এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. জিল্লুর রহমান, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল মাবুদ, পিপিএম; পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী, সামীম মোহাম্মদ আফজাল; বোরহান উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ড. কাজী শহিদুল আলম, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. মিজানুর রহমান , প্রফেসর ড. মো. সিরাজুল করিম এবং ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. আবদুল হামিদ মিঞা বক্তব্য রাখেন। এতে ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী, জোন প্রধান ও শাখা ব্যবস্থাপকগণ সম্মেলনে অংশ নেন।

/জিএম/টিএন/