ভারতের ‘রাইসিনা ডায়ালগে’ এবারও গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ও ভারত

ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদের পরাশক্তি হিসেবে তুলে ধরতে গত বছর দিল্লিতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করেছিল ভারত। ভারতের সেই ফ্ল্যাগশিপ ‘রাইসিনা ডায়ালগে’ গতবারের মতো এবারও উদ্বোধনী আসরে গুরুত্বপূর্ণ শরিক হিসাবে থাকবে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) থেকে দিল্লির কূটনৈতিক এলাকা চাণক্যপুরীর হোটেল তাজ প্যালেসে শুরু হচ্ছে এই সংলাপের প্রক্রিয়া।

গত বছরের মার্চে রাইসিনা ডায়ালগের প্রথম আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। তবে এ বছর এই সংলাপে যোগ দিতে ঢাকা থেকে আসছেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। ড. রিজভীর সঙ্গে ভারতের নীতিনির্ধারকদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথা সবারই জানা।

মঙ্গলবার সকালে রাইসিনা ডায়ালগের সূচনার সময় উদ্বোধনী প্যানেলে অন্যতম প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন গওহর রিজভী। একই প্যানেলে যোগ দেবেন নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ শরণ মাহাতো, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড ও আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই।

এছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে প্যানেলে বক্তব্য রাখবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। ভারত সরকারের পক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অবশ্য থাকতে পারছেন না। সম্প্রতি কিডনি প্রতিস্থাপনের পর তিনি এখনও সুস্থ হয়ে ওঠেননি।

এ বছরের রাইসিনা ডায়ালগে ৬৫টি দেশের আড়াইশ’রও বেশি বিদেশি প্রতিনিধি যোগ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন, শ্রীলঙ্কার ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান সরত ফনসেকা, মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের কমান্ডার অ্যাডমিরাল হ্যারি বি হ্যারিসের মতো বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি থাকবেন। গত বছর ডায়ালগের প্রথম পর্বে ৪০টি দেশের ১২০জন প্রতিনিধি ছিলেন। 

ভারতের এই উদ্যোগে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ। এটাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

ঢাকায় দীর্ঘদিন ভারতের হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা এক সাবেক কূটনীতিক সোমবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাইসিনা ডায়ালগকে ভারত আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে নিজেদের অবস্থান আরও জোরালো করে তুলতে চাচ্ছে তারা। তবে সেই উদ্যোগে একলা না থেকে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী বাংলাদেশকেও যে তারা শামিল করতে চাচ্ছে, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।’

গত বছর রাইসিনা ডায়ালগের উদ্বোধনী আসরের আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী আক্ষেপ করে বলেছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস আর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেই এই অঞ্চলের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

তার সেই মন্তব্যের পর দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি, বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক যে আরও খারাপ হয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আর এক প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের গ্রাফ যে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী, রাইসিনা ডায়ালগে ঢাকার সক্রিয় যোগদান থেকেই তা প্রমাণিত। 

এএআর/