বাংলা একাডেমির হিসাব বলছে, গত বছর ঘোষিত হিসাবে সাড়ে ৪৩ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অঘোষিতভাবে প্রকাশকদেরই হিসাব প্রায় ৫০ কোটি টাকারও বেশি। যদি ১৫শতাংশ রয়্যালিটিও ধরা হয়, তাহলে লেখকেরা সাড়ে সাত কোটি টাকা পাওয়ার কথা। বাংলাদেশে লেখকের সংখ্যা ২০০-এর বেশি নয়। সৌখিন ও নিজের টাকা বই করা লেখকের সংখ্যা আরও ৫০০ হবে। তার মানে মোটামুটি সাত শ’ থেকে একহাজার লেখকের মধ্যে এই সাড়ে সাত কোটি টাকা ভাগ হওয়ার কথা। আসলেই কি লেখকদের মধ্যে সেই টাকা বণ্টন হয়েছে?
এদিকে, নতুন লেখকদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে অভিযোগের পাহাড়। তারা মনে করেন, তার বই বিক্রি হচ্ছে, প্রকাশক হিসাব দেন না, টাকাও দেন না, লজ্জায় তারা চানও না। আবার পরের বছরের বই তাকেই দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই অভিযোগের বিপরীতে প্রকাশকরা বলছেন, বইয়ের বিক্রি কম হওয়ায় রয়্যালিটি দেওয়া সম্ভব হয় না। বাংলা একাডেমির বই বিক্রির হিসাব ঠিক নেই বলেও তারা দাবি করেন।
এদিকে একই প্রকাশনী থেকে বের হলেও নামকরা লেখক ও নতুন লেখকের সঙ্গে দুই ধরনের ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। একটি মাঝারি মানের প্রকাশনা সংস্থা নাম করা লেখকদের ক্ষেত্রে চুক্তি করলেও নতুন লেখকদের ক্ষেত্রে কোনও চুক্তি করতে আগ্রহী নন। গত কয়েকবছরে একাধিক বই একটা প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে, এমন একজন লেখক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জীবনের প্রথম বই বলে বন্ধুরা সবাই কমবেশি কিনেছিলেন। আমি আন্দাজ করতে পারি, কত কপি বিক্রি হয়েছিল। সেটি বেশি বিক্রি হওয়ায় কোনও রয়্যালিটি আমাকে দেওয়া হয়নি। বরং তুলনামূলক কম বিক্রি হয়েছে, এমন বইয়ের ক্ষেত্রে আমি রয়্যালিটির টাকা পেয়েছি।’
অন্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি সবসময় সবচেয়ে বেশি রয়্যালিটি হুমায়ূন আহমেদকেই দিয়ে এসেছি। গতবছরও তার পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ কী পরিমাণ অর্থ দিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর পরিমাণ ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকার মধ্যে হবে।’
বই বিক্রির যে ১৫ শতাংশ মানে সাড়ে সাত কোটি টাকা হিসাব বাংলা একাডেমি দিয়েছে, তা আসলে কোথায় যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবিন আহসান বলেন, ‘আমার মনে হয় না একাডেমির এই হিসাব ঠিক আছে। সাড়ে ৪৩ কোটি টাকা মোটেই কম নয়। এত টাকার বই বিক্রি হলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এই জায়গায় থাকতো না।’
প্রথমা প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী জাফর আহমদ রাশেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতবছর সবমিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার রয়্যালটি দিয়েছি আমরা। এই অংক বই বিক্রি অনুসারে প্রতি লেখকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথমা লেখকের সঙ্গে প্রফেশনালি চুক্তি করে, সে অনুযায়ী রয়্যালটি দেয়।’
প্রকাশক-লেখকের মধ্যে চুক্তি না হওয়ার প্রবণতার কথা উল্লেখ করে দিব্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মইনুল আহসান সাবের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে বই প্রকাশের আগে লেখক-প্রকাশকের মধ্যে চুক্তি করার প্রকণতা না থাকার কারণে অভিযোগগুলো বাড়ছে। প্রকাশককে টাকা দিয়ে বই ছাপানোর বিষয়টি বিদেশেও আছে। লেখক-প্রকাশকের বনিবনা হলে টাকা দিয়ে লেখক তার বই ছাপানোর ব্যবস্থা করতেই পারেন। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে এবং কোন শর্তে তা করা হচ্ছে, তা নিয়ে একটি চুক্তিতো থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকাশক কথা না রাখলে সে দায় সমিতির পক্ষেও নেওয়া সম্ভব নয়। সমিতি যেটা করতে পারে, সেটা হলো চুক্তিপত্রটা বাধ্যতামূলক করতে পারে।’
আরও পড়ুন: ধর্মীয় উন্মাদনা রোধে বই প্রকাশে নজরদারি!
/এমএনএইচ/