চূড়ান্ত বাছাই তালিকায় থাকার পরও কেন তিনি সিইসি পদে নিয়োগ পাননি,তা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের অনুসন্ধানে তিনটি কারণ চিহ্নিত করা গেছে।
আলী ইমাম মজুমদার বিএনপির সময়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন, তিনি সেনাসমর্থিত ড. ফখরউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কেবিনেট সচিব ছিলেন। এছাড়া তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।এই তিনটি কারণে মূলত তার সিইসি হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। এসব কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে তাকে সমীচীন মনে করেনি সরকার।সরকার দলীয় বেশ কয়েকজন নীতি-নির্ধারকের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন তারা।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দুজন নেতা বলেন, ১৯৭৫ সালের পরে সর্বশেষ সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে দেশ যখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে, সেই সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন আলী ইমাম মজুমদার। এরআগে বিএনপি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে ছিলেন তিনি। ফলে কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের বন্ধু নন সাবেক এই আমলা। তাছাড়া, তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হলে অন্য কোনও শক্তি তার ওপর ভর করতে পারে, এমন একটি শঙ্কা তৈরি হয়েছিল ক্ষমতাসীনদের মধ্যে।
আওয়ামী লীগের এই নীতিনির্ধারকরা বলেন, তাকে নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হলে আওয়ামী লীগের তথা সরকারের ক্ষতিই হতো। এখন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন হয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে, তখন কমিশন নিয়ে কথা উঠত।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সার্চ কমিটির তালিকায় আলী ইমাম মজুমদার ছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি তার বিবেচনায় তাকে নিয়োগ দেননি। এটা সম্পূর্ণই রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সার্চ কমিটি ১০ জনের তালিকা দিয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। রাষ্ট্রপতিতো ১০ জনকে নিয়োগ দিতে পারবেন না। এর ভেতর থেকে তিনি যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই নির্বাচন কমিশনে বড় দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার এখতিয়ার অনুযায়ী নিয়োগ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। যিনি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে রাষ্ট্রপতি মনে করেছেন তাকেই নিয়োগ দিয়েছেন ।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের অধ্যাপক ও সার্চ কমিটির সদস্য সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করার দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। আমরা যাছাই-বাছাই করে একটি তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছি। সেখান থেকেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এরপরের বিষয়টি আমাদের নয়। তাই কেন বাদ পড়েছেন সেই প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নাই ।’
সিইসি পদে সার্চ কমিটির বাছাই তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে থেকেও কেন নিয়োগ পেলেন না জানতে চাইলে আলী ইমাম মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সার্চ কমিটি আমাকে যোগ্য হিসাবে তাদের বাছাইয়ের তালিকায় দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে চূড়ান্ত করেছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এর ভেতরে থেকে যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই দায়িত্ব দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। এই নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নাই।’ তিনি বলেন, ‘কেন হতে পারিনি তা জানি না।’
/এপিএইচ/