পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি (দ্বিতীয় পর্যায়) (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রস্তাব’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি গত ১০ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিতও হয়েছে।
আরও জানা যায়, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটির জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। সংশোধানের পর প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। এ প্রকল্প দেশব্যাপী চলবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আবাসনসহ অন্যান্য অবকাঠামো বৃদ্ধির কারণে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যমান কৃষি জমি থেকে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে বাড়তে থাকা চাহিদার অনুপাতে ফসল পেতে সময়মতো চাষ, উপকরণের যথাযথ ব্যবহার ও ন্যূনতম সময়ে শস্য আহরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি জমিতে যান্ত্রিক শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি বলেও মনে করছেন কর্মকর্তারা। এছাড়া, কৃষি শ্রমিকের একটি বড় অংশ শিল্প ও পরিবহন খাতে স্থানান্তরিত হওয়ায় কৃষি শ্রমিকের অভাব দিন দিন প্রকট হচ্ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যম ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)’ বাস্তবায়নে মোট ব্যয় সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হয়েছে। ১৭২ কোটি ১৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন মেয়াদে এর বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।
কৃষি যন্ত্রপাতির অনূকুলে উন্নয়ন সহায়তার পরিমাণ ও আওতা বৃদ্ধি, সময়োপযোগী যন্ত্র প্রকল্প কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তকরণ, প্রদর্শনী কার্যক্রমে হাওড় এলাকা অন্তর্ভুক্তকরণ, কৃষি যন্ত্রপাতির গুণগতমান পরীক্ষার জন্য টেস্টিং ল্যাব প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন মোট ২৪৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
বর্তমানে কৃষি যন্ত্রপাতির অনুকূলে উন্নয়ন সহায়তার হার বৃদ্ধি, কৃষি যন্ত্রপাতির সেবা প্রদানকারী নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ভাড়ায় কৃষি যন্ত্রপাতির সেবা প্রদান কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তকরণ, কৃষি যন্ত্রপাতির টেস্টিং ল্যাব বিল্ডিংয়ের ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণ করে মেকানিক প্রশিক্ষণ সুবিধা তৈরি এবং প্রকল্পের মেয়াদ ১ (এক) বছর বাড়িয়ে মোট ৩৩৯ কোটি ৪৩ লাখ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। দ্বিতীয় সংশোধনের ব্যয় প্রথম সংশোধিত অনুমোদিত ডিপিপির প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ৯১ কোটি ২৬ লাখ টাকা (৩৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ) বেশি।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাণিশক্তি ও শ্রমিক ঘাটতির কারণে খামার যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই করা, খামার পর্যায়ে লাগসই কৃষি যন্ত্রপাতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ হ্রাস, শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি ও শস্য অপচয় কমিয়ে আনা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা বাড়ানোই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাওড় ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার আগ্রহী কৃষকদের জন্য ৭০ শতাংশ ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকদের জন্য ৫০ শতাংশ হারে কৃষি যন্ত্রপাতির অনুকূলে উন্নয়ন সহায়তা প্রদান, ১৫ হাজার ২৫০টি প্রদর্শনী ও মাঠদিবসের মাধ্যমে বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতির কাজ প্রদর্শন, ২০টি যান্ত্রিক খামার প্রদর্শন, গ্রামীণ মেকানিক ১ হাজার ৯৫০ জন, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র ব্যবহারকারী ৯ হাজার জন ও ৩৭৫ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দুইটি জাতীয় ও ৩০টি আঞ্চলিক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। দুইটি কৃষি যন্ত্রপাতি শুমারি করা হয়েছে। কৃষি যন্ত্রপাতির গুণগতমান পরীক্ষার জন্য একটি টেস্টিং ল্যাবরেটরি নির্মাণ ও এর ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণের মাধ্যমে মেকানিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। ২৫টি মেশিন শেড নির্মাণ করা হয়েছে। ভাড়ায় সেবা প্রদানের জন্য ১ হাজার ৫০০টি কৃষি যন্ত্রপাতিও সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘কৃষি শ্রমিকের অভাবে তো আর কৃষি কাজ ব্যহত করা যাবে না। তাই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা মনে করি, এটি সরকারের সময়পযোগী সিদ্ধান্ত। এর ফলে দেশের কৃষি এবং কৃষক উভয়ই লাভবান হবে।’
/এসআই/এফএস/
আরও পড়ুন-