রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে আমাদের কোনো দুর্বলতা ছিল না, এটি ছিল ষড়যন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন সৎ সাহস নিয়ে বলেছিলেন, এগুলো অসত্য এবং মিথ্যা। কানাডার আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে তার সেই বক্তব্যই প্রমাণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও আপসহীন। সেই সময় তিনি সংসদে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু হবে। তিনি কথা রেখেছেন। পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে। ২০১৮ সালে এটা সম্পন্ন হবে। পদ্মা সেতু নিয়ে সেই সময় ষড়যন্ত্র না হলে ২০১৫ সালের মধ্যেই তা চালু করা সম্ভব হতো। তাহলে ২০১৭ সালে এসে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের ইতিবাচক ফল পড়তো সামগ্রিক অর্থনীতিতে।’
রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূত ইয়াসোজা গুনাসেকারার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির নানান ইস্যু নিয়ে আলোচনার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই ষড়যন্ত্র করেছেন। তার ভাষ্য, ‘তিনি নোবেল পেয়েছেন, অথচ কখনও সাভার স্মৃতিসৌধে কিংবা শহীদ মিনারে যাননি। অথচ তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে মিলে ড. ইউনূসই এই চক্রান্ত সাজান। এর সঙ্গে দেশেরও কেউ কেউ জড়িত ছিলেন। যারা পত্রিকায় এবং টক শোতে নানান কটুক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এজন্য তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়সারকে অপমানিত করা হয়েছে বলে মনে করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সম্মানিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ছিল বানোয়াট। আসলে কেউ কেউ আছেন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহ্য করতে পারে না। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করে তারা। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বাধা দেওয়া সেটারই অংশ।’
ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে এখনও আলোচনা হয়নি। তবে কানাডার আদালতের রায় প্রকাশিত হওয়ার পর মানুষ এখন তাদের ঘৃণা করছে, ধিক্কার দিচ্ছ। এটাই বড় শাস্তি।’
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে ২০১১ সালে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দেয় এর প্রধান অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক। তাদের অনুরোধে কানাডার পুলিশ সে দেশের দুই নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এসএনজি ও লাভালিন ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০১২ সালে কানাডার আদালতে এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে দুর্নীতির ঘটনায় এসএনসিকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মামলাকে ‘অনুমানভিত্তিক’ ও ‘গুজব’ বলে উল্লেখ করেছেন কানাডার একটি আদালত। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের কোনও উন্নয়ন প্রকল্পে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি’কেও ‘নির্দোষ’ বলে রায়ে উল্লেখ করেন মামলাটির বিচারক ইয়ান নরডেইমার।
/এসআই /জেএইচ/