বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক: চার বৈঠকে নজর সরকারের

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র

গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলেছেন তিনি। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকাশ। তবে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা সামনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দুই দেশের মধ্যে চারটি বৈঠকের দিকে নজর রাখছেন।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া আর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনও (যেমন-দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি) নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন রসায়ন কী হবে তা বলা কঠিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারণে আমরা চারটি প্রাতিষ্ঠানিক বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রতিবছর এ বৈঠকগুলোর মাধ্যমেই মূলত দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পরিচালিত হয়। বৈঠকগুলো করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনাগ্রহ দেখালে বুঝতে হবে দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর ঠিকঠাকভাবে বৈঠক হলে বুঝতে হবে সম্পর্ক আগের মতো আছে এবং এটি আরও অগ্রসর হবে।’

চলতি বছর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠকগুলো হলো- এপ্রিলে বাণিজ্য বিষয়ক বৈঠক (ওই বৈঠকে টিকফা চুক্তি সই হতে পারে), জুনে অংশীদার সংলাপ, অক্টোবরে নিরাপত্তা সংলাপ এবং মিলিটারি সংলাপ।

ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ওবামা কেয়ার বাতিল, সাতটি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল বিষয়ে মার্কিন অবস্থান পরিবর্তন করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এসব বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মুসলিম দেশগুলোর ক্ষেত্রে সফর নিষেধাজ্ঞা ও অভিবাসীদের বিষয়ে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা মার্কিন দূতাবাসের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তারা আমাদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশিদের ভিসা না দেওয়া বা বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের কাছে কোনও নেতিবাচক নির্দেশনা আসেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশন থেকে পাওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, কিছুদিন আগে সেদেশে বাংলাদেশিদের জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, কোনও বাংলাদেশি যেন দেশ ত্যাগ না করে। কারণ আবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অসুবিধা হতে পারে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও ট্রাম্প প্রশাসনে বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে আমরা কিছুটা হলেও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে আছি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও যুক্তরাষ্ট্র ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত দু’দেশের সম্পর্কের বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি করা হয়েছে। বিপরীতে আমদানি হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানিতে গত বছর রফতানি হয়েছে ৩১ হাজার কোটি টাকা।

/এসএসজেড/এসএনএইচ/টিএন/