ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলা ঠিক নয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে তরুণ সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ইদানীং ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা বলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এটা সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। ভাষার প্রচলিত ধারা পরিবর্তন করে ‘বাংলিশ’ ভাষায় কথা বলা ঠিক নয়। এই জায়গা থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদের সরিয়ে আনতে হবে।  

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের আয়োজনে ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনেস্কোর ভাষা বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক অ্যানভিটা অ্যাবি। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকায় ইউনেস্কোর আবাসিক প্রধান বিট্রেস কালডুন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হাসান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক জিনাত ইমতিয়াজ আলী। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সভায় বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার ও উচ্চারণে নতুন প্রজন্মকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্ঞানার্জন ও প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য অন্য ভাষাও শিখতে হবে, তবে তা কোনোভাবেই মাতৃভাষাকে ভুলে নয়। মাতৃভাষার জন্য রক্ত দেওয়া বা জীবন উৎসর্গ করার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কম দেশই দিতে পেরেছে। তাই মাতৃভাষার মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। মাতৃভাষায় কথা বলা ও শিক্ষা গ্রহণ হৃদয়ে সবচেয়ে বেশি প্রোথিত হয়।

কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি প্রয়াত রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালামের সহযোগিতায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দানের বৃত্তান্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের ১৯০টি দেশ এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে পৃথিবীর সব মাতৃভাষা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও গবেষণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষাও সংগ্রহ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অনেক নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা থাকলেও লিখিত রূপ ছিল না। আমরা এ বছর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা সম্বলিত ২৪ হাজার বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। তারা নিজেদের ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। যারা ভাষা নিয়ে গবেষণা করেন, তারা এই ইনস্টিটিউট থেকে অনেক সহযোগিতা নিতে পারবেন। মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ক্যাটাগরি দুইতে উন্নীত করায় ইউনেস্কোকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা ঘোষণার জন্য তার সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্বের দরবারে এ ভাষার গৌরব ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সরকার প্রধানের দায়িত্ব লাভ করে আমি নিজেও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিয়মিত বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছি।

ইএইচএস/এএআর/