ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র পুরুষ ও মহিলা প্রশিক্ষকরা খুব শিগগিরই বাংলাদেশে গিয়ে বিজিবি’র সদস্যদের যোগাসন শেখাবেন বলে দুই বাহিনীর মধ্যে আলোচনায় স্থির হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা তাদের নিয়মিত শারীরিক অনুশীলনের অংশ হিসেবেই এই ‘যোগাভ্যাস’ করবেন।
এদিন দিল্লিতে বিএসএফের এক মুখপাত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বিএসএফে নিয়মিত ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে ‘ইয়োগা’ (যোগাসন) চালু হয়েছে এবং জওয়ানরা তার সুফলও পাচ্ছেন।
ইয়োগা চালুর খবর জানতে পেরে বিজিবি’র কর্মকর্তারা বিএসএফের কাছে এ বিষয়ে খোঁজখবর করেন। বিজিবি’র আগ্রহেই তাদের ইয়োগা শেখানোর প্রস্তাবে বিএসএফও সানন্দে রাজি হয়েছে।
ঢাকাতে দুই বাহিনীর মহাপরিচালকের মধ্যে সদ্য সমাপ্ত সীমান্ত সম্মেলনেই বিজিবির সদস্যদের ইয়োগা শেখানোর ব্যাপারে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে। সম্মেলনের শেষে দুই বাহিনীর পক্ষ থেকে যে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়, তাতেও একেবারে শেষের দিকে খুব সংক্ষেপে বিষয়টি উল্লেখও করা হয়, যদিও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
‘বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষীরাও এখন এই ইয়োগার উপকার পেতে আগ্রহী, ফলে আমরাও তাদের জন্য ইয়োগা প্রশিক্ষক পাঠাতে রাজি হয়েছি। এই পদক্ষেপ দুই বাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্ককে আরও জোরালো করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস’ বলেছেন মি ভরদ্বাজ।
বস্তুত ভারতের বর্তমান নরেন্দ্র মোদি সরকার ইয়োগাকে জনপ্রিয় করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই।
মূলত ভারতের উৎসাহেই জাতিসংঘ প্রতি বছরের ২১ জুনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ভারতও ইয়োগাকে দেশে-বিদেশে জনপ্রিয় করার জন্য এই দিনটিকে নানাভাবে ব্যবহার করতে চেষ্টার কোনও ত্রুটিও রাখছে না।
ইয়োগাকে জনপ্রিয় করার জন্য ভারত সরকারের সবচেয়ে বড় অবলম্বন হলেন বাবা রামদেব, যোগগুরু হিসেবে যার নাম ভারতের ঘরে ঘরে। গত বছরদেড়েক ধরে তিনি বিএসএফের বিভিন্ন শিবিরে গিয়েও সীমান্তরক্ষীদের ইয়োগা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। রাজস্থানের যোধপুর, জয়সলমির, বিকানের, পাঞ্জাবের ফাজিলকা, পাঠানকোট বা জম্মুর নানা শহরেও তিনি বিএসএফ জওয়ানদের জন্য এরকম বহু ইয়োগা ওয়ার্কশপ করেছেন।
এর মধ্যেই অন্তত বিশ হাজার বিএসএফ জওয়ান বাবা রামদেবের ওয়ার্কশপ থেকে সরাসরি ইয়োগা ট্রেনিং নিয়েছেন । তাদের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকজন নিজেরাই উপযুক্ত প্রশিক্ষক হিসেবেও নিজেদের গড়ে তুলেছেন।
বিএসএফের বর্তমান মহাপরিচালক নিজেই ইয়োগার একজন বড় ফ্যান, ফলে বিজিবির দিক থেকে যখন ইয়োগা শেখার প্রস্তাব এসেছে, তিনি তাতে সায় দিতেও দুবার ভাবেননি।
তবে ইয়োগা নিয়ে ভারতে বিতর্কও কম নয়। ভারতে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মুসলিম ধর্মীয় নেতা যুক্তি দিয়ে থাকেন, ইয়োগা আসলে একটি হিন্দু ধর্মীয় শারীরিক অনুশীলন এবং এখানে সূর্যপ্রণামের মতো এমন কিছু আচার আছে, যা মুসলিমদের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়।
হায়দ্রাবাদের ডাকসাইটে এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বা লখনৌতে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য জাফরিয়াব জিলানি তো ভারতীয় মুসলিমদের আন্তর্জাতিক যোগ দিবস সরাসরি বয়কটেরও ডাক দিয়েছেন।
ভারত সরকার ও তাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অবশ্য বরাবরই বলে আসছে, ইয়োগার সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই, এটি একটি চমৎকার শারীরিক অনুশীলন মাত্র। তবে তার পরেও দেশের মুসলিম সমাজের মধ্যে ইয়োগা যে খুব একটা জনপ্রিয় হয়েছে বা দারুণ সাড়া ফেলেছে, সেকথা বলা যাবে না মোটেও!
এই পটভূমিতে ভারতের একটি মুসলিম-প্রধান প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষীরা যখন নিজে থেকেই ভারতের কাছ থেকে ইয়োগা শেখার আগ্রহ প্রকাশ করছেন, সেটাকে ইয়োগার জন্য অসম্ভব একটা ভালো বিজ্ঞাপন বলেই ভারত মনে করছে।
/এপিএইচ/