দিনটি কান্না আর স্তব্ধতায় ভরা

16997294_10212461459718362_516109910_n

পিলখানা ট্র্যাজেডি বা বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) হত্যাকাণ্ডের ৮ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআরের বিপথগামী সদস্যরা বিদ্রোহের নামে হত্যা করে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, তার স্ত্রী, বাসার কাজের মেয়ে ও বেড়াতে আসা আত্মীয়রাও। বিজিবি’র সদর দফতর পিলখানায় সেদিন বিডিআর সদস্যরা যে তাণ্ডব চালিয়েছিল তা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।

২০০৯ এর পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে গান লিখেছিলেন গীতিকার নূরিতা নূসরাত খন্দকার। তার গানের কথাতেই সেদিনের ভয়াবহ সেই ঘটনার চিত্র ফুটে ওঠেছে। এ কোন জওয়ানেরা/রক্তের হোলি খেলে গেলো/পিলখানা রক্তে ভাসিয়ে দিলো/ শতাব্দী সে লজ্জায় মাথা নোয়ালো....।

পিলখানা ট্র্যাজেডির পর গত আট বছর ধরে স্বজনেরা রয়ে বেড়াচ্ছেন দুঃসহ স্মৃতি। অপেক্ষা করছেন কবে বিচার শেষ হবে। তারা জানতে চান, ঘটনার পেছনে আসলে কোনও ঘটনা ছিল কিনা। দেশের সূর্য সন্তানদের যারা হত্যা করেছে নির্বিচারে তারা কিসের লোভে এমন কাজ করলো সে প্রশ্ন চোখে নিয়ে বেঁচে আছেন স্বজনরা। নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে বারবারই উচ্চারিত হচ্ছে নেপথ্যের ঘটনা কি ছিল জানতে চান তারা, সে প্রশ্নের জবাব কেন মিলল না।

বনানী কবরস্থানে ফুল দিচ্ছেন স্বজনরা

আজকের দিনটিকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন কবর জিয়ারত করতে আসা অনেকে। স্বজনহারা পরিবারগুলো বলছে, দেশের কাজে নেমে তাদের স্বজনরা জীবন দিয়েছেন। এভাবে গণহত্যা ঘটানোর পর দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবেই পালন হওয়া উচিত।

শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনবাহিনীর প্রধান (সম্মিলিতভাবে) এবং স্বরাষ্ট্র সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর স্বজনরা শ্রদ্ধা জানান। শহীদ কর্নেল এমদাদুল হক স্মৃতি সংসদের ব্যানার নিয়ে এসেছিলেন স্বজনরা। তারা এই দিনটিকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

IMG_5187

একটি মানুষের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যায় তা উদাহরণ তাহসীন রহমান। বাবা মিজানুর রহমানকে যখন হত্যা করা হয় তখন তার বয়স ৯ বছরের কাছাকাছি। মা মারা গেছেন আগেই। বাবা-মা হারা দুইভাই এখন থাকেন দুই জায়গায়। তাহসীন বলে, ‘‌আমাদের কারোর কোনও দোষ তো ছিল না। তারপরও কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটলো? সে প্রশ্নের জবাব হয়তো কোনদিন মিলবে না।’

এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০১০ সালের ১২ জুলাই পিলখানা হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে সম্পূরক চার্জশিটে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়াও বিস্ফোরক আইনে ৭৮৭ জনকে অভিযুক্ত করে আলাদা একটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে রাজধানীর বখশিবাজারে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ এজলাস বসিয়ে ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি দু'টি মামলার একসঙ্গে বিচারকাজ শুরু  হয়। দীর্ঘ দুই বছর বিচার কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পিলখানা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। এ রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন ও ২৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। বেকসুর খালাস দেওয়া হয় ২৭১ জনকে।

/ইউআই/এসটি/

আরও পড়ুন: পিলখানা হত্যা মামলার ৮ বছর, বিচার শেষ হয়নি আজও