আকস্মিক শুরু হওয়া পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আবদুল হাইয়ের মতো অসংখ্য মানুষ মঙ্গলবার এভাবেই দুর্ভোগের শিকার হন। সায়েদাবাদের মতো নগরীর অপর দুটি আন্তঃজেলা টার্মিনাল গাবতলী ও মহাখালীতেও ছিল একই চিত্র। ধর্মঘটের কারণে শত শত বাস এসব টার্মিনালে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
আবদুল হাইয়ের সঙ্গে যখন এ প্রতিবেদকের কথা হয়, তখন পাশেই বসে ছিলেন তিথি (৩০) নামে বোরকা পরিহিত এক নারী। সঙ্গে তার মা, সন্তান, বোন ও পরিবারের দু’জন সদস্য। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডেমরা থেকে সকাল দশটায় টার্মিনালে এসেছি। যাবো নোয়াখালী। বাস না পেলে হয়তো বাসায় ফিরেই যেতে হবে।’
আবদুল হাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোনও ঘোষণা ছাড়া এভাবে ধর্মঘট ডাকা ভালো হয়নি। আমরা এভাবেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকব?’
পরিবহন ধর্মঘটের কারণে শুধু দূরপাল্লাই নয়, রাজধানীর ভেতরে ও আশপাশের এলাকার কর্মজীবী মানুষকেও চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে। সকালে দেখা গেছে, সিটি সার্ভিসের হাতে গোনা কিছু বাস চলাচল করায় অপেক্ষমাণ লোকজন চড়তে পারছেন না। এ কারণে কেউ রিকশা, কেউবা অটোরিকশায় গন্তব্যে যান। তবে বেশিরভাগ মানুষই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যান।
সকালে মিরহাজীর বাগ বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আবদুল খালেক নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘আমার কাছে তো মিরপুর যাওয়ার মতো রিকশা কিংবা অটোরিকশায় যাওয়ার মতো টাকা নেই। তাহলে কিভাবে যাবো?’
দিন শেষে অফিস ছুটি হওয়ায় রাজধানীর পরিবহন সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। বিকেল পর্যন্ত সিটি সার্ভিসের কিছু বাস চলাচল করলেও সন্ধ্যার আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিকাল পাঁচটায় অফিস ছুটির পর হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা যায় রাজপথে। সুযোগ পেয়ে ভাড়া বাড়িয়ে দেন রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা।
আকস্মিক ধর্মঘট সম্পর্কে জানতে মঙ্গলবার বেলা ২টার পর এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন শ্রমিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কার্যালয়ে। সেখানে পাওয়া যায় ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুর রহিম বক্স দুদুকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিকভাবে কোনও ধর্মঘট ডাকিনি।’
আবদুর রহিম বক্স দুদু বলেন, ‘আমরা চাই প্রচলিত মোটরযান আইনে দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি হোক। এর বাইরে কোনও বিচার হলে শ্রমিকরা তা মেনে নেবে বলে মনে হয় না।’ তিনি বলেন, ‘ধর্মঘট চলছে, সরকার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেনি। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আজ সকাল থেকে সারাদেশে আকস্মিকভাবে ডাকা এই ধর্মঘট আদালত অবমাননাকর ও গণবিরোধী। কেননা, নিম্ন আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা। কিন্তু তার বদলে ডাকা এ ধর্মঘট জনগণকে জিম্মি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার একটি গভীর নীলনকশা। ধর্মঘটের নামে তারা কি গাড়িচাপা দিয়ে মানুষ হত্যাকে বৈধতা দিতে চায়? অবিলম্বে এ গণবিরোধী ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হোক।’
/ওএফ/এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
পরিবহন ধর্মঘট অযৌক্তিক: ওবায়দুল কাদের